বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। চীনের পর ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। স্পেনেও বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে মারা গেছেন আরও ৬৮৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ৭ হাজার ৫০৩ জন।
ইতালিতে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সবেমাত্র দু-এক জনের মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হতে শুরু করেছিল। তখনও দেশটির সরকার খুব একটা ভাবেইনি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। তার এক সপ্তাহের মধ্যে সংখ্যা বদলে যায় অনেকটাই।
বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল, কলেজ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করার জন্য। চালু করা হয় কোয়ারেন্টাইন। তখন তারা ছিল পুরোটা ছুটির আমেজে। তখনও ইতালির জনগণ ভাবতেও পারেনি তারা কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে চলেছে।
প্রাথমিক অবস্থায় তারা এই ভাইরাস আমলে নেইনি। অবাধে ঘোরাঘুরি চলতেই থাকল। বিবাহ, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকীতেও চলতে থাকলো মানুষের জাঁকজমক আয়োজন। এভাবে এক সপ্তাহ চলার পর সংখ্যাটা দিনেদিনে বাড়তে শুরু করেছিল। হাসপাতালে বেড নেই। মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই। নেই ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। এমন পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে ইতালি হয়ে গেল এক মৃত্যুপুরী।
অসাবধানতার কারণে আজ দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজারের কাছে। রাত পোহালে শুনতে হবে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
আজ ইতালি এই করোভাইরাসে (কোভিড-১৯) প্রথম আক্রান্ত ও উৎপত্তিস্থান চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। ডাক্তার ও নার্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে তারাও করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
এ থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি না? দেশের প্রতিটা নাগরিকে এখনই সচেতন হতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহির হবার কোনো দরকার নেই। কারণ আমরা কেউ জানি না কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত না!
দেশে মহামারী শুরু হবার আগেই আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ মহামারী যদি একবার শুরু হয়ে যায়, আমাদের মতো ছোট দেশে অধিক জনসংখ্যা রক্ষা করার দুঃসাধ্যকে, সাধন কঠিন হয়ে যাবে। দেশের কমিউনিটি পর্যায়ে যদি এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটে, তাহলে আমাদের অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।
আমরা এমন অকাল মৃত্যু চাই না। যে মৃত্যুতে মানুষ তার প্রিয়জনের লাশ স্পর্শ করতে পারবে না। সন্তান স্পর্শ করতে পারবে না পিতা-মাতার লাশ। স্ত্রী স্বামীর লাশ। স্বামী স্ত্রীর লাশ। ভাই ভাইয়ের লাশ। প্রতিবেশী প্রতিবেশীর লাশ। আপন মৃত্যু ভয়ে শুধু দূর হতে দু’ফোটা চোখের জল ঝরানো ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। এতটা করুণ কষ্টের মৃত্যু আমরা চাই না।
হে পৃথিবীর মালিক, প্রিয়জনের মৃত্যূতে মানুষের চোখ হয়ে যাচ্ছে সাগর থেকে মহাসাগর। ইতালি, চীন, স্পেন, ইরানসহ ১৯৫ দেশে চলছে মৃত্যুর মিছিল। তুমি কি এমন রোগ দিয়েছ যার কোনো প্রতিকার নেই! বাংলাদেশের মানুষদের এই মহামারী হতে রক্ষা কর মালিক।
এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে চার লাখেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৮ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৯ জন। মারা গেছেন ২১ হাজার ১৪৮ জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন