ক্রিকেট মাঠে উইকেটরক্ষকের কাজ সদা সতর্ক থেকে প্রতিটি বল নির্বিঘ্নে গ্লাভসবন্দী করা। যেকোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী থাকতে হয় একজন উইকেটরক্ষককেই। তার যেকোনো ভালো ক্যাচ কিংবা ছোট কোনো ভুলে বদলে যেতে পারে ম্যাচের চিত্রনাট্য।
বল ব্যাট ছুঁয়ে না আসলেও ক্যাচ ঠিকই ধরতে হয় উইকেটরক্ষককে। নয়তো সম্ভাবনা থেকে যায় বাই রান হওয়ার। একজন উইকেটরক্ষক যেনো পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে গড়পড়তা তিনশর কাছাকাছি ক্যাচ নিয়েই থাকেন। কেননা প্রতিটি ডেলিভারির পর সতীর্থদের করা থ্রো আগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসেই, পরে যায় বোলারের হাতে।
এতো এতো ক্যাচ নেয়ার অভ্যাস, তা যে শুধু ক্রিকেট মাঠেই কাজে লাগে, এমনটা কিন্তু নয়। যেকোনো দরকারি মুহূর্তে কাজে লাগতে পারে প্রাত্যাহিক জীবনেও। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভারতের বিধর্বা প্রদেশের ২৪ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক সালোনি অ্যালট। খালি হাতে তিনি ‘ক্যাচ’ করেছেন এক সিঁধেল চোরকে।
ঘটনা গত রোববার মধ্যরাতের। পরিবারের সঙ্গে বাইরে গিয়েছিলেন সালোনি। ফিরতে ফিরতে বেজে গিয়েছিল রাত প্রায় দেড়টা। বাড়ি ফিরে নিজের গাড়ি থেকে নামতেই দেখেন, এক সিঁধেল চোর বাড়ির ভেতরে কিছু করার চেষ্টা করছে। তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান সালোনি, প্রায় ১০ মিনিট সেই চোরের সঙ্গে লড়াইয়ের পর সক্ষম হন পুলিশের হাতে তুলে দিতে।
অনেক রাত হয়ে যাওয়ার কারণে শুরুতেই প্রতিবেশিরা টের পাননি যে কী হচ্ছে সেখানে। নিজের মেয়েকে এভাবে লড়তে দেখে পুলিশ ডাকেন সালোনির বাবা-মা। কিন্তু পুলিশ আসার আগপর্যন্ত সেই চোরের সঙ্গে রীতিমতো মারামারিই করতে হয়েছে সালোনিকে।
চোরের সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে দুইটি লম্বা ব্লেড, একটি স্ক্রু ড্রাইভার এবং কিছু ধারালো যন্ত্রাংশ ছিলো। খালি হাতে লড়াই করেই সেসব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চোরটিকে ধরে রাখতে সক্ষম হন সালোনি। এতে অবশ্য হাতে খানিক চোট পেয়েছেন তিনি। পরে গিত্তিখাড়ান থানার পুলিশ এসে নিয়ে যায় সেই চোরকে।
জানা গেছে, এ সিঁধেল চোরের নাম ধনরাজ পঞ্চেশ্বর। যে কি না মধ্য প্রদেশের বালাঘাট এলাকার বাসিন্দা। শহরে তার অতীত রেকর্ড ঘেঁটে পরবর্তী তদন্ত ও পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।
এদিকে এমন সাহসী কাণ্ডে এরই মধ্যে নিজের এলাকার হিরো বনে গেছেন সালোনি। এমনকি সিনিয়র পুলিশ ইন্সপেক্টর সুনিল গাঙ্গুর্দেও প্রশংসাও ভাসিয়েছেন সালোনিকে। তিনি বলেন, ‘একজন সিঁধেল চোরের সঙ্গে এভাবে খালি হাতে লড়াই করা চাট্টিখানি কথা নয়।’ সালোনির এ সাহসী দৃষ্টান্তের ঘটনা শেয়ার করেছেন ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিথালি রাজও।
সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে সালোনি বলেন, ‘ঘরের ভেতর আমার বাবা-মাকে দেখে চোরটা সীমানাপ্রাচীর টপকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি তখন গাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম, ঠিক আমার সামনেই পড়ল সে। তখন কিছু করার আগে ভাবারও সুযোগ ছিলো না, আমি তাকে ধরার চেষ্টা করলাম। সেও সর্বশক্তি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। একদমই সহজ ছিলো না বিষয়টা। পরে আমি দুই পা দিয়ে আটকে ফেলি সেই চোরকে এবং ততক্ষণে অন্যরাও এগিয়ে আসে সাহায্য করতে।’
মূলত ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্তমানে ক্রিকেট থেকে খানিক দূরেই রয়েছেন সালোনি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ২৬ ম্যাচে ৩৭ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়ার পর পড়াশোনার জন্য ক্রিকেট থেকে ছুটি নিয়েছেন তিনি। ক্রিকেটার পরিচয়ের বাইরেও সালোনি একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া বাইক চালানো ও গিটার বাজানোতেও হাতেও বেশ পটু তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন