ভারতের বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে মুখ খুললেন মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা। তিনি বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বর্তমানে ভারতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দুঃখজনক। এটা অত্যন্ত খারাপ।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ইয়র্কে মাইক্রোসফটের এক অনুষ্ঠানে বাজফিড নিউজের এডিটর-ইন-চিফ বেন স্মিথকে এ কথা বলেন সত্য নাদেলা।
শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকেননি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একজন বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেখতে চাই, যিনি ভারতে এসে এ দেশে বসবাস করে সক্রিয় অবদান রাখবেন এবং ইনফোসিসের (ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) পরবর্তী সিইও হয়ে উঠবেন।’
তার এ বক্তব্যের পর টুইটারে মাইক্রোসফট ইন্ডিয়া অফিস একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে সত্য নাদেলা বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই উচিত তার সীমানা নির্ধারণ, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অভিবাসন নীতি যথার্থভাবে করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের সরকার ও জনগণ বিতর্কের মাধ্যমেই বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে। ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে আমি বড় হয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে অভিবাসনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আমি এমন এক ভারতের স্বপ্ন দেখি, যেখানে একজন অভিবাসী ভারতের সমাজ ও অর্থনীতি থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাবে।’
মাইক্রোসফটের সিইওর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এভাবেই দেশের আইটি সেক্টরের লোকদের এই আইনের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখাতে হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
নাদেলার বক্তব্যকে সমর্থন করে টুইট করেন রামচন্দ্র গুহ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সত্য নাদেলা যা অনুভব করেছেন তা মুখে প্রকাশ করেছেন জেনে আমি আনন্দিত। আমি চাই যে আমাদের আইটি সেক্টরের মানুষজন তাদের মতামত প্রকাশ্যে আনার সাহস পান।’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সরব রামচন্দ্র গুহ। সিএএ নিয়ে তিনি লাগাতার কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। তিনি এই আইনের প্রকাশ্যে বিরোধিতাও করেছেন। বেঙ্গালুরুতে সিএএর বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য গত মাসে বেঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেফতার করে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমবারের মতো গুগল, উবার, অ্যামাজন এবং ফেসবুকের মতো বড় সংস্থায় কর্মরত দেড় শতাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত পেশাদাররা সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তারা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওই চিঠির মাধ্যমে ওই পেশাদাররা সত্য নাদেলা, সুন্দর পিচাই এবং রিলায়েন্সের প্রধান মুকেশ আম্বানির মতো ব্যক্তিত্বদের কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিষয়ে প্রকাশ্যে নিন্দা করার অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে সিএএ ও এনআরসি যৌথভাবে একটি মুসলিমবিরোধী পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে ভারতে মুসলমানদের প্রতি বৈশ্বিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন