সমূদ্র উপকূলে সুটকেসে বন্দী অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলে লাশের কয়েকটি টুকরা। এরপর সেই লাশের তদন্তে নেমে শুধু তার পরিচয় নয়, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ ডিসেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ের মাহিমের সমূদ্র উপকূল থেকে সুটকেসটি উদ্ধার করা হয়। ওই সুটকেসে টুকরা করে কাটা মৃতদেহের সঙ্গে থাকা জামাকাপড়ের সূত্র ধরে প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগে তারই পালিত মেয়েকে গ্রেপ্তার এবং তার প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ওই মেয়ে পালিত বাবার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।
সান্তাক্রজ পূর্ব এলাকার বাসিন্দা নিহত বেনেট রেইবেলো (৫৯) মুম্বাইয়ে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পুলিশ জানায়, তদন্ত করতে গিয়ে নিহতের পালিত মেয়ে আরাধ্যা জীতেন্দ্র পাতিল ওরফে রিয়া বেনেট রেইবেলোকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ১৬ বছরের প্রেমিককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তকারীদের দাবি, তারা দুজন খুনের কথা স্বীকার করেছে।
যেভাবে খুনের রহস্যভেদ
গত ২ ডিসেম্বর মাহিমে সমুদ্র উপকূলে যে সুটকেসটি পাওয়া গিয়েছিল, তার মধ্যে ছিল এক প্রৌঢ়ের দেহের খণ্ডবিখণ্ড করা কিছু অংশ। সঙ্গে ছিল দুটি জামা, একটি সোয়েটার এবং একটি প্যান্ট। ওই জামাকাপড়ের মধ্যে বেলগামী এলাকার ‘আলমস মেনসওয়্যার’ নামের একটি দর্জির দোকানের স্টিকার ছিল। সেই সূত্র ধরেই এগোতে শুরু করে পুলিশ। ওই দোকানের রেজিস্ট্রার মিলিয়ে ওই জামাকাপড়ের মালিক হিসেবে উঠে আসে বেনেটের নাম।
এবার বেনেটের নাম দিয়ে খোঁজ শুরু হয় ফেসবুকে। সেখানে আবার ওই সুটকেসে উদ্ধার হওয়া সোয়েটার পরে বেনেটের একটি ছবিও পেয়ে যায় পুলিশ। আর ফেসবুক থেকেই মেলে তার বাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু তদন্তকারী অফিসাররা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন তালাবন্ধ। প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, পালিত মেয়ে আরাধ্যার সঙ্গেই থাকতেন বেনেট। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে বাড়িটি তালাবন্ধ।
এক তদন্তকারী কর্মকর্তা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘তদন্তে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর দুজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে আরাধ্যা প্রথমে দাবি করেছিলেন, তার বাবা কানাডায় রয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করেছেন, তার প্রেমিকের সাহায্যে খুন করেছেন, কারণ তার বাবা তাকে যৌন হয়রানি করছিলেন।’
বেনেটকে কীভাবে খুন করা হয়েছিল, তারও বর্ণনা আরাধ্যা দিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ ভাষ্যমতে, আরাধ্যা জানিয়েছেন, গত ২৬ নভেম্বর প্রথমে বেনেটকে একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তারপর ছুরি দিয়ে খুন করেন। খুনের পরও তাদের সান্তাক্রুজের ফ্ল্যাটেই তিনদিন রেখে দিয়েছিলেন বেনেটের দেহ। ওই সময় তারা দেহটি খণ্ড খণ্ড করে কাটার কাজ করেন। তারপর একটি সুটকেসে ভরে ভাকোলার কাছে মিঠি নদীতে সেই সুটকেসটি ফেলে দেন। এরপর গত ২ ডিসেম্বর মাহিমের উপকূলে সেই সুটকেটসটি সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ডাঙায় উঠে আসে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আরাধ্যার দাবিগুলো কতটা সত্যি, সেটা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে যৌন হয়রানির অভিযোগও।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন