ই সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে ইসরায়েলকে সরে যেতে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদে গ্রহণ করা এক প্রস্তাবে দেশটিকে দখলকৃত পুরো এলাকা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দিনভর অধিবেশনে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট আরও চারটি পদক্ষেপ অনুমোদন করেছে সাধারণ পরিষদ। তবে আইনগতভাবে এসব প্রস্তাব মানতে বাধ্য নয় তেল আবিব। ফলে মূলত প্রতিকী হয়ে ওঠা এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও অবৈধ বসতি নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিরোধিতা জোরালো হতে পারে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।
ইসরায়েল সিরীয় গোলান মালভূমি দখল করে রাখলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার স্বীকৃতি দেয় না
১৯৬৭ সালের জুনে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সিরীয় ভূখণ্ড গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। সেখান থেকে সিরিয়ান আরব বাসিন্দাদের বেশিরভাগই পালিয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে এটি পুনর্দখলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সিরিয়া। ১৯৮১ সালের ৪ ডিসেম্বর একতরফাভাবে ওই এলাকাকে নিজেদের অংশ ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ একে অকার্যকর আখ্যা দেয়।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গ্রহণ করা এক প্রস্তাবে ইসরায়েলকে পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমিসহ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ বন্ধ করতে বলা হয়।
বুধবার সাধারণ পরিষদে সিরীয় গোলান মালভূমি সংক্রান্ত প্রস্তাবের পক্ষে ৯১টি দেশ ও বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯টি দেশ ভোট দেয়। আর ৬৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এই প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালে দখলকৃত গোলান মালভূমির পুরো এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। এটি ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের গ্রহণ করা অপর এক প্রস্তাবের বাস্তবায়ন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিরীয় গোলান উপত্যকায় চলমান দখলদারিত্ব ওই এলাকায় বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি স্থাপনের পথ রুদ্ধ করেছে।
গোলান উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি লাইনের কাছে দখলকৃত সিরীয় ভূমিতে ইসরায়েলি বসতি
গোলান প্রস্তাব ছাড়াও বুধবার ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট আরও চারটি পদক্ষেপ নিয়েছে সাধারণ পরিষদ। এর একটিতে ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে। আরেকটিতে ইসরায়েলকে অবৈধ বসতি নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অপর এক পদক্ষেপে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন দফতরের কাজের স্বীকৃতি দেয় সাধারণ পরিষদ। আর সর্বশেষ পদক্ষেপে ফিলিস্তিন সংক্রান্ত তথ্য ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মূল ছয়টি অঙ্গের একটি নিরাপত্তা পরিষদ। পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত দশ সদস্য দেশের সমন্বয়ে মোট ১৫ সদস্যের এই পরিষদ কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করলে তা মানতে সদস্য দেশগুলো আইনগতভাবে বাধ্য। তবে সব সদস্য দেশের সমন্বয়ে গঠিত হলেও সাধারণ পরিষদ কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করলে তা মানতে আইনগতভাবে বাধ্য নয় কোনও সদস্য দেশ। ফলে বুধবার গৃহীত প্রস্তাবগুলো মেনে চলতে আইনগতভাবে বাধ্য নয় ইসরায়েল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন