‘রাজধানীর মিরপুরের ওই ফ্ল্যাটে অনেক অপরিচিত তরুণ-তরুণীর আনাগোনা ছিল। স্থানীয়রা মনে করছেন, সেখানে অনৈতিক কার্যকলাপ চলত। বিষয়টি নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। কাজের মেয়েকে নিয়েই রহিমা ওই বাসায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে সোহেল ও রহিমার দ্বিতীয় স্বামী কুদ্দুস মিয়া আসতেন। ’
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মিরপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে এক বৃদ্ধা ও তার গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।
এ ঘটনায় নিহত রহিমা বেগমের (৬০) কথিত পালিত ছেলে সোহেলকে আটক করা হয়েছে।
মিরপুর-২ সেকশনের ‘বি’ ব্লকের ২ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে (১৮) নিয়ে থাকতেন রহিমা। নিহত সুমির বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বাদুড়তলায়।
জোড়া লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খবর দেয়া হয় সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম এ ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, দুজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। দুই কক্ষবিশিষ্ট ওই বাসার বিছানাসহ জিনিসপত্র এলোমেলো ছিল। সোহেল নামে একজনকে আটক করেছি। আশপাশের লোকজন সোহেলকে রহিমার পালিত ছেলে হিসেবে জানে।
তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই বাসায় অনেক অপরিচিত তরুণ-তরুণীর আনাগোনা ছিল।
স্থানীয়দের ধারণা, সেখানে অনৈতিক কার্যকলাপ চলত। বিষয়টি নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। কাজের মেয়েকে নিয়েই রহিমা ওই বাসায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে সোহেল ও রহিমার দ্বিতীয় স্বামী কুদ্দুস মিয়া আসতেন।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার সুমি এই বাসায় কাজে যোগ দেয়। এর আগে সুমির পরিচিত (খালা) এখানে কাজ করতেন। রহিমা ছয় মাস আগে এখানে বাসা ভাড়া নেয়।
রহিমার মেয়ে রাশেদা বেগম বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে থাকি। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে সোহেল আমাকে ফোন করে জানায়, মাকে কে যেন মেরে ফেলেছে। লাশ বাসায় আছে। এর পর আমি মিরপুরের উদ্দেশে রওনা দিই।
এক প্রশ্নের উত্তরে রাশেদা বলেন, মায়ের কাছে কিছু টাকা ছিল। এ নিয়ে সোহেলের সঙ্গে ঝগড়ার কথা মা জানিয়েছিল। আমার ধারণা, টাকার জন্য সোহেল এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমার কোনো ভাইবোন নেই। সোহেলকে পালিত ভাই হিসেবেই জানি।
পুলিশের মিরপুর ডিভিশনের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোহেলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য জানা যাবে।
মিরপুর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো. দুলাল হোসেন জানান, ফ্ল্যাটের কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে মঙ্গলবার আশপাশের বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মেঝেতে দুজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন