বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন আমাজন ধ্বংসে নানা ফন্দি আঁটছে কাঠুরেরা। অভাবের সুযোগ নিয়ে কখনও আদিবাসীদের দরজায় টাকা ও টেলিভিশন উপহার নিয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আবার কখনও পাকা ঘরবাড়ি বা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে দেয়ার টোপ ফেলছে।
পেরুর আশানিনকা আদিবাসী গোষ্ঠীকে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে তাদের জমিতে থাকা গাছ কাটতে চাইছে কাঠুরেরা। অনেক আদিবাসী পরিবার অভাবের তাড়নায় তাদের টোপ গিলতে বাধ্য হচ্ছে। এতে উজাড় হচ্ছে আমাজন বন।
আশানিনকা গোষ্ঠীর সদস্য রামনকে টিভি সেটের বিনিময়ে তার জমির সব গাছ কাটার প্রস্তাব দিয়েছিল কাঠুরেরা। প্রাণ হারানোর ঝুঁকি থাকলেও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আদিবাসীদের কোষাগার ‘আদেলাইদা বাস্টামান্টে’ দ্য গার্ডিয়ানকে জানায়, কাঠুরেরা গাছের বিনিময়ে ওই ভূমিতে স্কুল, ঘর বা সভাগৃহ বানিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মেহগনি, ওক ও টরনিলো গাছ।
পেরুর কাটিভিরেনি এলাকায় এসব গাছ বহুদূর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উপহারসামগ্রীর বাইরে ঋণ দেয়ার বিনিময়েও গাছ কাটার প্রস্তাব দিচ্ছে কাঠুরেরা। কেউ কেউ এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বাঁধছে সংঘর্ষ, হত্যার ঘটনা।
রামন (আসল নাম নয়) বলেন, তাদের এলাকাকে কাঠুরেমুক্ত রাখার আন্দোলনের কারণে ২০১৪ সালে আশানিনকার চার বনরক্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোকে তাদের ভূমি ও গাছ ছেড়ে দেয়ার জন্য অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে চাপে রাখা হয়।
পেরুর প্রায় ৬০ শতাংশ (ছয় লাখ ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার) আমাজন বনের অংশ, যা মোট বনের মাত্র ১৩ শতাংশ। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৫ একর আমাজন বনাঞ্চল হারিয়েছে পেরু।
রামন আবিষ্কার করেছেন, কাঠুরেরা গাছের বিনিময়ে আদিবাসী পরিবারকে টিভি বা অন্যান্য উপহার দিচ্ছে। আবার কখনও কখনও তাদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে। রামন তার স্বজাতিকে তাদের এলাকার গাছ না বিক্রি করতে এবং উপহারসামগ্রী ফিরিয়ে দিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কাঠুরেদের হামলার ভয়ে গোপনে চলছে এ প্রচারণা। আমাজন রেইন ফরেস্ট রক্ষায় রামন দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের চেষ্টা করছেন। এজন্য তিনি ওয়েলসের নৃবিজ্ঞানী ডিলওয়াইন জেনকিন্সের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
আশানিনকা আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণার জন্য কয়েক দশক ধরে এখানে বসবাস করেন তিনি। ২০১৪ সালে তিনি মারা যাওয়ার আগে রেইন ফরেস্ট দাতব্য সংস্থা ‘কুল আর্থে’র সঙ্গে যোগযোগ করতে বলেছিলেন।
ব্রিটিশ এমপি ফ্রাঙ্ক ফিল্ডের গঠিত কুল আর্থ আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করে। কঙ্গো, কম্বোডিয়া, পাপুয়া নিউগিনিতে নৃগোষ্ঠীদের অর্থ সহায়তা ও অধিকার নিয়ে কাজ করে সংস্থাটি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন