আম্মানে অবস্থিত জর্ডানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ সেন্টার’ প্রতি বছর ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিমস’ শিরোনামে সারাবিশ্বের প্রভাবশালী ও খ্যাতনামা মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। দীর্ঘ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে তারা এই তালিকা তৈরি করে।
এ তালিকাটি ৫০০ মুসলিম নামেও পরিচিত। অন্যান্য বারের মতো এবারও তারা জরিপ চালিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা তৈরি করেছে। সাধারণত ৫০০ সদস্যের তালিকা থেকে প্রথম ধাপে সর্বাধিক প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের পর দ্বিতীয় ধাপে তারচেয়েও অধিক প্রভাবশালী সেরা ১০জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয়।
সে ধারাবাহিকতায় তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের প্রকাশনায় বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী সেরা ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নেই তাদের নির্ঘণ্ট ও পরিচয়।
১. বিচারপতি শায়খ মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি
বিশ্ববিখ্যাত স্কলার ও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মুফতি তাকি উসমানি রয়েছেন তালিকার প্রথম স্থানে। গত বছরের তালিকায় তিনি ছিলেন ষষ্ঠ নাম্বারে। ৭৪ বছর বয়সী বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব সামগ্রিক জ্ঞান-অভিজ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্য, কর্মখ্যাতি ও পারিবারিক আভিজাত্যের বিবেচনায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
তিনি হাদিস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। এছাড়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরিয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। উর্দু, বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তার গ্রন্থাদি রয়েছে।
২. আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি
বিশ্বের প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইরানের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ আয়াতুল্লাহ আলী আল-খোমেনি। গত বছরের জরিপ-তালিকায় তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন। আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী হোসেনী খামেনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালের ১৭ জুলাই। তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ইরানের ৮ কোটি শিয়া মুসলমানের আধ্যাত্মিক নেতা।
৭৭ বছর বয়সী এ ধর্মীয় নেতা রাজনীতি ও প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৮১ থেকে ৩ আগস্ট ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি ইরানের ৩য় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফোর্বস সাময়িকীর ২০১২ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ২১ জনের তালিকায় তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন। খামেনি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম সমর্থক।
৩. মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান
৫৮ বছর বয়সী শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান হলেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরের সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার। তিনি প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহায়ানের তৃতীয় পুত্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বজন-সম্মানিত প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি একাত্তরে স্বাধীনতা থেকে ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, দানশীলতা, দাতব্য ও উন্নয়নের কারণে তাকে এ তালিকায় মনোনিত হয়েছেন। ১০ জন ব্যক্কির তালিকায় তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
৪. সালমান বিন আবদুল আজিজ
তিনি বর্তমানে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকার চতুর্থ বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ। তিনি ২০১১ সাল থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে¡ ছিলেন। তারও আগে ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। বাদসাহ সালমান ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি তার সৎভাই বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। । সৌদি বাদশাহ হিসেবে তিনি পবিত্র কাবা শরিফেরও প্রধান। ২০১৬ ও ২০১৭-তে তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন ও ২০১৮ তে ২য় অবস্থানে ছিরেন।
৫. কিং আবদুল্লাহ (দ্বিতীয়) ইবনে আল হুসাইন
এই তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জর্ডানের রাজা কিং আবদুল্লাহ দ্বিতীয়। ২০১৭ ও ২০১৬ এর তালিকায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন ও গত বছরে তৃতীয় হয়েছিলেন। ৫৪ বছর বয়সী এ রাজা রাজনীতি ও ঐতিহ্যবাহী বংশের বিবেচনায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন। রাজত্বের পাশাপাশি বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী জেরুজালেমের বিভিন্ন অঞ্চলের দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছেন।
৬. রজব তাইয়েপ এরদোয়ান
রজব তায়িপ এরদোগান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি। ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এরদোগান। তিনিই ২০০৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার শীর্ষে ছিলেন। তবে চলতি বছরের জরিপে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন তিনি।
২০০১ সালে তিনি জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। বিভিন্ন কারণে বিশ্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। তার দল তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে টানা ৪ বার সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
৭. কিং মুহাম্মাদ ষষ্ঠ
মরক্কোর রাজা কিং মুহাম্মদ তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন। গত দুই বছরও তিনি একই স্থানে ছিলেন। ৫৩ বছর বয়সী এ রাজা রাজনীতি, প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দেশীয় সার্বিক উন্নয়নের বিবেচনায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি পারিবারিকভাবে সরাসরি মহানবী মুহাম্মাদ সা.-এর বংশধর। গত ৪০০ বছর ধরে কিং মুহাম্মদের পূর্বপুরুষরা মরোক্কো শাসন করে আসছেন।
৮. সাইয়েদ আলী হুসাইন সিস্তানি
এই তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছেন ইরানের শিয়া বিপ্লবী নেতা সাইয়েদ আলী হুসাইন সিস্তানি। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও তিনি সপ্তম স্থানে ছিলেন। তবে ২০১৬ সেরা দশের বাইরে ছিলেন। ৮৬ বছর বয়সী এ ব্যক্তিত্ব শিক্ষাজ্ঞান ও বংশক্রমের বিবেচনায় এবারো শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
৯. শায়খ হাবিব উমর বিন হাফিজ
নবম স্থানে রয়েছেন শায়খ হাবিব উমর বিন হাফিজ। তিনি ইয়েমেনের তারিমে অবস্থিত ‘দারুল মুস্তাফা’ সংস্থার পরিচালক। এর আগের বছর অষ্টম স্থানে ছিলেন তিনি। প্রিয় নবী সা.-এর জীবনীভিত্তিক বিভিন্ন রচনাকর্ম ও আয়োজনের কারণে তিনি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব তালিকায় নবব হয়ে এবার দ্বিতীয়বারের মতো স্থান পেয়েছেন।
১০. সুলতান কাবুস বিন সাদ-আল-সাইদ
১০ স্থানে রয়েছেন ৭৯ বছর বয়সী সুলতান কাবুস বিন সাদ-আল-সাইদ। তিনি ওমানের রাজবংশের ১৪ তম বংশধর । একজন সামাজিক ও পোলিটিক্যালি সক্রিয় রাজা, যিনি সুলতান হিসাবে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছেন। সুলতান কাবুস ওমানকে বিপ্লব ও আধুনিকায়িত করেছেন। একটি দরিদ্র, বিচ্ছিন্নতাবাদী দেশ থেকে আফ্রিকা মহাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতায় নিবেদিত ভূমিতে রূপান্তর করেছেন।
সূত্র: মুসলিম৫০০
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন