তেল শোধনাগারে হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শন করে সৌদি আরব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে এগুলো প্রমাণ করে ওই হামলায় জড়িত ছিল ইরান। তাঁরা বলছেন, ১৮টি ড্রোন আর সাতটি ক্রুজ মিসাইল একটি জায়গা থেকেই ছোড়া হয়েছিল। তবে এগুলো ইয়েমেন থেকে ছোড়া হয়নি বলেই দাবি তাঁদের।
ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা অবশ্য আগেই এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
তবে শনিবারের ওই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। একই সঙ্গে দেশটি যে কোনো হামলার শিকার হলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রও দাবি করেছিল ওই হামলার পেছনে ছিল ইরান। বুধবার সৌদি আরবে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একে 'অ্যাক্ট অব ওয়ার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এ ঘটনার জবাব দেওয়ার জন্য 'অনেক বিকল্প' ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। চূড়ান্ত একটি বিকল্প আছে এবং এ ছাড়া আছে আরো বিকল্পও। আমরা দেখবো। আমরা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি।
কী প্রমাণ পেল সৌদি আরব
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে ওই হামলার প্রমাণাদি উপস্থাপন করে সৌদি আরব যাতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালকি বলেছেন, যারা যা উপস্থাপন করেছে সেটিই প্রমাণ করে হামলা এসেছিল উত্তর দিক থেকে এবং সেটি 'প্রশ্নাতীতভাবেই ইরান দ্বারা পরিচালিত'।
কর্নেল মালকি অবশ্য বলেন, তারপরও তারা যেখান থেকে হামলা হয়েছে সেই স্থানটি চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
যেসব ধ্বংসাবশেষ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে ইরানের ইউএভি বা চালকবিহীন উড়ন্ত বাহনের 'ডেল্টা উইং' ছিল বলেও দাবি করা হয়। মালকি বলেন, কম্পিউটারে ইউএভি ডাটা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে এটি ইরানের। তিনি বলেন ১৮টি চালকহীন বাহন দিয়ে হামলা হয় আবকাইক তেল শোধনাগারে এবং সাতটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে দুটি জায়গায়। এর মধ্যে চারটি খুরাইজ তেলক্ষেত্র ও তিনটি পড়ে আবকাইকে।
মালকি আরো বলেন যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে সেগুলো এসেছিল উত্তর অভিমুখে। তিনি ম্যাপ ও ক্ষয়ক্ষতির ছবিসহ আবকাইকে চালকবিহীন যানের হামলার ভিডিও প্রদর্শন করেন। তবে ঠিক কোথা থেকে হামলাটি এসেছে সে জায়গাটি চিহ্নিত করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন এটি বের করা মাত্রই প্রকাশ করা হবে।
যা বলছে ইরান
ইরানের দিক থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইরানের একটি কূটনৈতিক নোট দেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, 'ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা দ্রুতই ইরানের জবাবে পাবে।'
ইরানের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, সংবাদ সম্মেলন দেখাচ্ছে যে সৌদি আরব ওই হামলার বিষয়ে 'কিছুই জানে না'। ওদিকে ইয়েমেন হুতি বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র বলছে স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া ছবিগুলো বানানো এবং সৌদি আরব প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি চেপে গেছে। সামরিক মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইয়াহইয়া সারিয়া জোর দিয়ে বলেছেন যে হুতিরাই হামলা চালিয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
যদিও যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার করে বলেছে যে তাদের বিশ্বাস ইরানই হামলার পেছনে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক জবাবে খুব একটা উৎসাহী নন। বুধবার তিনি বলেন সামরিক সংঘাতে জড়ানো সহজ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ঘটনার অভিজ্ঞতা হলো পরে এটি জটিল হয়ে ওঠে। তবে সৌদি আরবের ব্রিফিং এর আগে ট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
ওদিকে মাইক পম্পেও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের সাথে দেখা করে আলোচনা করেছেন। আর সৌদি আরব ছেড়ে গেছেন হামলার বিষয়ে তদন্ত করতে আসা জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন