অতি-উঁচু থেকে আসা হামলা প্রতিরোধে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে সৌদি আরব। কিন্তু স্বল্প খরচের ড্রোন ও ক্রজ মিসাইলের সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠল না সেসব অস্ত্র।
সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় শনিবার হামলা চালিয়েছে প্রতিবেশী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এতে দেশটির তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে।
এ হামলা প্রতিরোধে রিয়াদের অক্ষমতাই বলে দিচ্ছে তাদের প্রস্তুতি কতটা কম। উপসাগরীয় দেশটির অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পদের ওপর এর আগেও কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সাড়ে চার বছর আগে ইয়েমেনে হানা দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের ক্রমাগত বিমান হামলায় হাজার হাজার নিরাপদ লোক নিহত হয়েছেন। দরিদ্র রাষ্ট্রটির অর্থনীতি একেবারে খাদের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, তাদের চিরবৈরী ইরান সম্ভবত এ হামলা চালিয়েছে।
মঙ্গলবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইরান থেকে এ হামলা চালানো হয়েছে।
এতে ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিন মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। আর হুতি বিদ্রোহীরা দায় স্বীকার করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ মিসাইলের সক্ষমতা রয়েছে ইরানের, যা সৌদি আরবের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
তেহরান ও আঞ্চলিক ছায়াবাহিনীর ভৌগোলিক নৈকট্যের কথা উল্লেখ করে থিংকট্যাংক সিএসআইএস এমন দাবিই করছে।
এমনকি খুব সীমিত আকারের হামলাও সৌদি আরবের জন্য বড় আঘাত হয়ে যায়। সম্প্রতি সৌদি বেসামরিক বিমানবন্দর, তেল পাম্পিং স্টেশন ও শিবা তেলক্ষেত্রে হুতিদের হামলা সেই কথাই বলে দিচ্ছে।
সৌদি আরবের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, আমরা উন্মুক্ত। কোনো বাস্তব স্থাপনায় কোনো বাস্তব সুরক্ষা নেই।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বের অন্যতম বড় তেল কোম্পানি আরমাকোর দুটি স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯০-৯১ সালের উপসাগরীয় সংকটের সময় কুয়েতের তেল কূপে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর আঞ্চলিক তেল স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলা হচ্ছে এটি।
মঙ্গলবার আরমাকো বলছে, প্রাথমিকভাবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার চেয়েও কম সময়ের মধ্যে উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবু এ হামলা সৌদি তেল বাজারকে বড় ধাক্কাই দিয়েছে।
রিয়াদ জানিয়েছে, প্রাথমিক ফল এই আভাস দিচ্ছে, যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা ইরানি। কিন্তু কোত্থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
কর্মকর্তারা প্রথমে ড্রোন শনাক্ত করলেও তিন মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এতে ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোন হামলা হয়েছে। প্রথমে যা ধারণা করা হয়েছিল, এসব অস্ত্র ছিল তার চেয়েও উচ্চমাত্রায় দুর্বোধ্য ও অত্যাধুনিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এ হামলা সৌদি আরবের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সেপ্টেম্বরের ট্র্যাজেডির মতোই। এটি পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও অস্ত্র আমরা কিনেছি, সেগুলো এখন কোথায়? আমাদের রাষ্ট্র ও তেল স্থাপনা সুরক্ষার জন্যই এসব সংগ্রহ করেছিলাম।
‘তারা যদি এখানে এতটাই নির্ভুল হামলা চালাতে পারে, তবে আমাদের বিলবণীকরণ স্থাপনা ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুকেও আঘাত হানতে সক্ষম হবে,’ বললেন এ বিশ্লেষক।
সৌদি আরবের প্রধান বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে মার্কিন নির্মিত দীর্ঘপাল্লার প্যাট্রিয়ট। বড় বড় শহর ও স্থাপনাকে সুরক্ষা দিতে এগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
যা রাজধানী রিয়াদসহ সৌদি শহরগুলোকে নিশানা করে হুতিদের অতি-উঁচু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এর পর হুতিরাও দেশটিতে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা শুরু করেছে।
সে হিসাবে ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল খুবই নিচ দিয়ে উড়তে পার। এটির পাল্লাও খুবই কম। এতে পর্যাপ্ত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে ভূপাতিত করা প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এক জ্যেষ্ঠ উপসাগরীয় কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হলো ড্রোন। কারণ এগুলো রাডারের নিচ দিয়ে উড়তে সক্ষম। ইরাক ও ইয়েমেনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় সৌদি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন