ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কিসের কথা? পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আলোচনা হলে, এখন তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে হবে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এক টুইট বার্তায় বলেন, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সর্বসম্মতি জানিয়েছে সংসদ। তিনি লিখেছেন, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি জীবদ্দশায় যেন এটা দেখে যেতে পারি।
এতদিন ভারতের অবস্থান ছিল, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তা নিয়ে অন্য কোনও দেশ বা আন্তর্জাতিক মঞ্চের নাক গলানোয় নয়াদিল্লির আপত্তি থাকলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় ভারতের আপত্তি ছিল না।
কিন্তু রোববার (১৮ আগস্ট) রাজনাথ জোরালো অবস্থান নিয়ে বলেন, পাকিস্তান নিজের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করলেই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আলোচনা হলে তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ‘পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য প্রাণ দিয়ে দেব’ বলে মন্তব্যের পর থেকেই বিজেপি প্রচার করছে, এবার নরেন্দ্র মোদি সরকার পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের দখলে নিয়ে আসবে। আজ বস্তুত রাজনাথের মুখেও সেই সুর শোনা গেল।
দু’দিন আগে রাজনাথই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে মোদি সরকারের নতুন অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এতদিন আগ বাড়িয়ে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না-করাই ভারতের নীতি ছিল। রাজনাথ বলেন, এতদিন এই নীতি মানা হলেও ভবিষ্যতে কী হবে, তা পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করছে।
আজ রাজনাথ হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির জন আশীর্বাদ যাত্রায় গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনাতেও মোদি সরকারের অবস্থানের নতুন ইঙ্গিত দিলেন। কারণ ১৯৯৭'তে মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনে ইন্দ্রকুমার গুজরাল ও নওয়াজ় শরিফের আলোচনার পরে দুই দেশ সামগ্রিক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে। তাতে জম্মু-কাশ্মীরসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনায় রাজি হয় দু’দেশ।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পরে ভারত সত্যিই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার টেবিল থেকে কাশ্মীরকে সরিয়ে ফেলবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু অন্তত দেশের মানুষের সামনে মোদি সরকার কাশ্মীর প্রশ্নে আরও কট্টর অবস্থান নিতে চাইছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা।
কংগ্রেসের অভিযোগ, সবটাই রাজনীতি। দলের নেতা অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি বলেন, প্রতিটি বৈঠকে, জনসভায় তারা ৩৭০ নিয়ে কথা বলছেন। তাই মনে হচ্ছে, সবটাই ভোটের দিকে তাকিয়ে করা। যা করেছেন, তা তো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত একে মহিমান্বিত করায় আসল উদ্দেশ্য খোলসা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, বিরোধীরা এই অভিযোগ তুলবেন বলেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনাথ সিংকে দিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করানো হচ্ছে। কারণ রাজনাথ সরকারের বিশ্বাসযোগ্য মুখ। তিনি বললে বোঝানো যাবে। তিনি যে মুখ ফসকে পরমাণু-অস্ত্রে নীতি বদলের কথা বলেননি, তা বোঝাতে ওই মন্তব্য রাজনাথ পরে টুইটও করে দেন।
রাজনাথ বলেন, পাকিস্তান সবার দরজায় কড়া নেড়ে সাহায্য চাইছে। যদিও আমেরিকা ওদের নাকে ঝামা ঘষে বলেছে, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
তার দাবি, পাকিস্তান ভারতে ভাঙন ধরাতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রী তার ৫৬ ইঞ্চির ছাতির প্রমাণ দিয়েছেন। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসের পরে বালাকোট অভিযানে উচিত জবাব দিয়েছে। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন