শরিফুল হাসান
শরিফুল হাসান, মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হেড অব ব্র্যাক
কাল রাতে কলকাতা এসে খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। চোখের ডাক্তার দেখাতে এসে জীবন গেল মেয়েটার।
আজ সকালে নাস্তার দোকানে শুধু নয়, আনন্দবাজারের প্রধান খবরও এটি। ঘটনা মর্মান্তিক।
বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছিলেন কাজী মহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) ও ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। বৃষ্টির কারণে কলকাতার এক যাত্রীছাউনিতে অপেক্ষা করছিলেন শুক্রবারর রাতে।
কিন্তু হুট করে দ্রুতগতির জাগুয়ার গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে যায় ছাইরঙা একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ। গাড়ির আরোহীরা বেঁচে গেলেও মারা যান তারা।
পুলিশ ও বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রের খবর, মইনুলের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি বাংলাদেশের ‘গ্রামীণফোন’-এর কর্মী। তানিয়া বাংলাদেশের সিটি ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তার বাড়ি ঢাকার মহম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের লালমাটিয়ায়। তাদের সঙ্গেই কিয়স্কের সামান্য দূরে দাঁড়িয়েছিলেন কাজী সফি রহমতউল্লাহ। মইনুল তার তুতো ভাই। মইনুল ও রহমতউল্লাহর বন্ধু ছিলেন তানিয়া। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন রহমতউল্লাহ।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে খবর, ১৪ আগস্ট বেড়াতে ও চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসে মার্কুইস স্ট্রিটের একটি হোটেলে উঠেছিলেন মইনুলরা।
রহমতউল্লাহ জানান, তারা খাবার খেতে বেরিয়ে ছিলেন। হোটেলে ফেরার সময় জোরে বৃষ্টি নামায় কিয়স্কে আশ্রয় নেন। আজ রোববার তিনজনেরই বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল।
বরাবরের মতো অপরাধী আরসালান পারভেজ কলকাতার একটি নামি বিরিয়ানি চেনের অন্যতম মালিকের ছেলে।
তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো), ৪২৭ (সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা) এবং ৩০৪(২) (অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বেকবাগানের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী আরসালান স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেছিলেন।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলাকালীন অডি গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসার অভিমন্যু গৌড়ের। এ দুর্ঘটনা সেই স্মৃতি উসকে দিচ্ছে। অভিমন্যুর মৃত্যুতে অভিযুক্ত ছিলেন দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর ছেলে সাম্বিয়া সোহরাব।
প্রশ্ন হলো- ধনীদের এমন মধ্যরাতের বেপরোয়া জীবনের কাছে আর কত প্রাণ যাবে? আমার দেশের দুজন মানুষের এমন মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ঘটনার বিচার চাইছি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হোক।
লেখক: শরিফুল হাসান, মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হেড অব ব্র্যাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন