চলতি বছরে দুটি প্রধান শহরের মেয়র নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের জন্য নতুন করে হুমকি নিয়ে আসছে তার সাবেক দুই মিত্র।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগলু ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আলী বাবাকান এরদোগানের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দল গড়তে যাচ্ছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এমন তথ্যই দিয়েছে।
এতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা তুর্কি প্রেসিডেন্টের ভোটব্যাংকে প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ক্ষমতাসীন একে পার্টিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাবাকান ও দাভুতগলুর নতুন দল গঠন নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছে।
দুটি শহরে হেরে যাওয়ার পর তুরস্কের চলতি শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (একে) পার্টির জন্য বলতে গেলে এখন খারাপ সময়ই যাচ্ছে।
দলটির ক্ষমতায় আসার প্রথম দশকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন বাবাকান। সেই সময়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে তাকেই। দল থেকে তার পদত্যাগের ঘোষণাকে একে পার্টির জন্য প্রথম আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, তুরস্কের নতুন রূপকল্পের দরকার। কাজেই নতুন চেষ্টা অপরিহার্য। তার নতুন দলের নীতি একে পার্টি থেকে ভিন্ন হবে বলেও জানান বাবাকান।
তুরস্কে এখন দুই অংকের মুদ্রাস্ফীতি, প্রবৃদ্ধির ধীরগতি চলছে এবং লিরাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কাজেই তুরস্কের এই অর্থনৈতিক আতঙ্ক থেকে বাবাকানই আশার আলো হয়ে আসতে পারবেন বলে অনেকের ধারনা।
এ কারণে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে এই অর্থনীতিবীদকে। দিন দশেক আগে একটি অনলাইন সম্প্রচারে সাক্ষাতকার দিয়েছেন বাবাকান ও দাভুতগলু। সেখানে তারা নতুন দল গঠনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
তবে তাদের এই রূপকল্প হুমকি হয়ে আসবে বলে মনে করছেন না এরদোগান। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বাবাকান ফাটল ধরাতে পারেন বলে তিনি হুশিয়ারি করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান একেবারেই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন না। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক লিসেল হিন্টজ বলেন, নিজের ব্যক্তিগত শাসনের বিরুদ্ধে যাওয়া সব হুমকিকে তিনি মোকাবেলা করে যাবেন।
এরদোগানের বিরোধিতা করে যাওয়া কুর্দিশ নেতা সেলাহাট্টিন দিমিরটাসকে জেলে ভরা ও সুশীল সমাজ এবং একে পার্টির বিরোধীদের বিচারের দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি।
গত পাঁচ বছরে তুরস্কে পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে। কজেই নতুন কোনো দল গঠন হলে নির্বাচনের জন্য তাদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে দাভুতগলু পদত্যাগ করেন। তবে প্রতিজ্ঞা করেন যে প্রকাশ্যে কখনোই এরদোগানের সমালোচনা করবেন না তিনি।
কিন্তু অনলাইন সম্প্রচারে তিন ঘণ্টা বক্তব্য দেয়ার সময় তার সেই প্রতিজ্ঞা থেকে সরে আসেন তিনি। দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন একে পার্টিতে থাকার কথাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি কোনো বিকল্প না থাকে, তবে নতুন একটি দল গঠন করবো।
একটি পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াদের সঙ্গে দাভুতগলুর যুক্ত হওয়া এখন অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এর আগে একটা বিভক্তির ইতিহাস তার জীবনে রয়েছে।
যাই হোক, এমন খবরও বাজারে প্রচলিত রয়েছে যে বাবাকানের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও একে পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ গুল।
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের বিরুদ্ধে আবদুল্লাহ গুলের প্রার্থী হওয়ার কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কখনোই তাকে সামনে আসতে দেখা যায়নি।
অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর বাবাকানের সমালোচনা করেন এরদোগান। তিনি বলেন, বহু ইস্যু নিয়ে তার দ্বিমত রয়েছে। বিশেষ করে সুদের হার নিয়ে।
মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সুদারের হার কম রাখতেই জোর দিয়ে আসছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
২০০১ সালে তুরস্কের অর্থনীতি সংকটে পড়ে যাওয়ার পর ক্ষমতায় আসে একে পার্টি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নিতে হয়েছে দেশটিকে।
এরপর গত ১৮ বছর ধরে ব্যাপক প্রভাব নিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে দলটি। এখন শুরু হয়েছে সেই অর্থনৈতিক অধঃপতন। তুরস্কে এখন মুদ্রাস্ফীতি ১৫.৭ শতাংশ। আর বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই অর্থনীতি ২.৬ শতাংশ সংকুচিত হয়ে গেছে। হিন্টজ বলেন, তুরস্কর অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক বিভাজন মোকাবেলায় কী পরিকল্পনা নিচ্ছেন, তার ওপরই নির্ভর করছে বাবাকানের গড়তে যাওয়া নতুন দলের সফলতা।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একে পার্টি। আর পরের বছর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসছেন এরদোগান ও তার এই দলটি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন