মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দহরম মহরম নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিনি নিধনে নেতানিয়াহু যত পদক্ষেপ নিয়েছেন সবসময়ই তাতে নির্লজ্জ সমর্থন জুগিয়েছেন ট্রাম্প। মুসলিম বিদ্বেষী মানিকজোড় হিসেবেও এই দুজনকে অভিহিত করেন অনেকে। এবার এই জুটির সঙ্গে ভিড়েছেন আরেকজন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কট্টর হিন্দুত্ববাদের পাশাপাশি তার মধ্যে যে চরম মুসলিম বিদ্বেষও কাজ করে তা কারও অজানা নয়। তবে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং ফিলিস্তিনি জাতিমুক্তির সংগ্রামের পক্ষে অবস্থানের কারণে এতোদিন তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনবিরোধী প্রস্তাবে সমর্থন দেননি। কিন্তু এবার খোলস ছেড়ে স্বরূপে আবির্ভুত হয়েছেন মোদি। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি একটি সংগঠনের পর্যবেক্ষক মর্যাদা কেড়ে নিতে ইসরায়েলি দাবির পক্ষে ভোট দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে এবারই প্রথম ইসরায়েলকে সমর্থন দিল ভারত। একই সঙ্গে আরও একটি প্রশ্নও তুলে দিল, মুসলিম নিধনে কি একাট্টা হচ্ছেন মুসলিমবিরোধী তিন নেতা?
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েলি বসতি বাড়াতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনিও এতে শামিল হয়েছেন। এমন অভিযোগ হর হামেশাই ওঠে যে, ফিলিস্তিন নয়, এই মানিকজোড়ের আসল উদ্দেশ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া। সারা বিশ্বে ১৮টি মুসলিম প্রধান দেশ রয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারলে দুটো কাজ হবে। একটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের অস্ত্র বিক্রি হবে দেদারসে। আর দ্বিতীয়টি হলো দেশগুলোতে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
মুসলিম বিদ্বেষী মোদিও এবার লাজ লজ্জার বালাই না করে মুসলিম হটাও ষড়যন্ত্রে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু্র সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় এতোদিন ধরে ভারতের অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং ধারবাহিক ছিল। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে ছিল তারা। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনের সমর্থন আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ভারত। মোদির শাসনামলে এসে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো গাজার সহিংসতা প্রশ্নে ইসরায়েলবিরোধী এক ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিল ভারত। তবে এবার আর ভোটদানে বিরত থাকেননি মোদি। বরং সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। নেতানিয়াহু এজন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি যে শুধু ইসরায়েলের পক্ষে একটি ভোট দিয়েছেন তা নয়। বরং তিনি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এটাই স্পষ্ট করেছেন যে, ভারত এখন থেকে সরাসরি ইসরায়েলকেই সমর্থন দেবে, ফিলিস্তিনকে নয়। এর মাধ্যমে ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর মতোই মোদির মুসলিমবিরোধী নীতি প্রকাশ্যে চলে এলো। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও এই একটি ইস্যুতে তিন নেতা এখন একাট্টা বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এই ত্রিরত্ন বিশ্বময় মুসলিম বিদ্বেষ বাড়িয়ে পৃথিবীকে নতুন করে অগ্নিগর্ভে পরিণত করেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন