চলতি মাসের ৬ তারিখ বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা পবিত্র ঈদ আল-ফিতর উদযাপন করে। ঐতিহ্যগত ভাবে পবিত্র রমজান মাসের পর টানা তিন দিন বিশ্বের সকল মুসলিমরা ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
ঈদ এমন একটি সময় যখন মুসলিমরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। এদিন তারা বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার এবং পানীয় পান করেন আর টানা একমাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত অনেকের নিকট এ দিনটি শুধুমাত্র তাদের পরিবার কেন্দ্রিক আবদ্ধ হয়ে একাকী বসে থাকার একটি দিনে পরিণত হয়।
মুনিরা ম্যাডিসেনর ঠিক এরকমই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। শৈশবে মুনিরা একটি খ্রিষ্টান চর্চা কেন্দ্রিক বেড়ে উঠেছিলেন কিন্তু একসময় তিনি চার্চের দেয়া বিশ্বাস পরিত্যাগ করে সংশয়বাদী হয়ে উঠেন। ২০১৫ সালে তা মাতা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি তারা মায়ের সেবা করার জন্য বাড়ি ফিরে আসেন এবং ২০১৬ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
প্রথম দিকে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি তার পরিবারের নিকট উপস্থাপন করেন নি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবেই তার নতুন ধর্ম বিশ্বাস চর্চা করতেন এবং ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে সালাত আদায় করা শিখেন। তার প্রথম রমজানে তিনি ইসলামিক শিক্ষার বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সমূহ শিক্ষা লাভ করেন তবে তিনি কোনো মুসলিম কমিউনিটির অংশ হতে পারেন নি।
মুনিরা ম্যাডিসন বলেন, ‘আমি আসলে বলতে চাই যে, রমজান মাসে আমি একা হয়ে পড়ি কিন্তু এই মাস আমার আত্মাকে প্রশান্ত হতে সাহায্য করে।’
বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি তে ‘Makespace’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসলিমরা একসাথে সালাত আদায় করতে পারেন। চলতি বছর পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকে তার প্রতিষ্ঠানে ইফতারের আয়োজন করেছিল।
তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ রমজান মাসে তাদের বিশ্বাসের অভিজ্ঞতা লাভ করেন কারণ তারা তখন তাদের বন্ধু, পরিবার এবং সংস্কৃতির আশপাশে থাকেন।’
‘আমি ইসলামে আমার ভ্রমণ নিয়ে খুব গর্বিত কারণ এটি আমাকে সৃষ্টিকর্তার আরো নিকটে আসতে সহায়তা করেছে।’
‘Makespace’ এ মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের সাথে পরিচিত হতে আসা ১৫ বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কারী যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-বাহিনীর সদস্য ডেভিড ডিবেই বলেন, তিনি পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন কাজের অংশ হিসেবে ইরাকে কাটিয়েছেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ইরাকে থাকার সময় তিনি তারাবির সালাতের শব্দ শুনতে পেতেন কারণ সালাত চলাকালীন এর প্রতিটি শব্দ স্পীকারের মাধ্যমে প্রচার করা হত। যদিও তিনি একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে কর্মরত ছিলেন কিন্তু তার কর্মস্থলে থাকা সদস্যদের মধ্যে তিনিই একমাত্র মুসলিম ছিলেন।
‘Pew Research Center’ এর মতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৩.৪৫ মিলিয়ন মুসলিমদের মধ্যে ডেভিড ডিবেই এর মত অন্তত এক-পঞ্চমাংশ ধর্মান্তরিত মুসলিম। ডেভিডের ভাষায়, একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম হিসেবে তিনি নিজেকে দুটি ভিন্ন দলের মানুষদের মধ্যে বসবাস কারী হিসেবে আবিষ্কার করেন যাদের অধিকাংশই তার দিকে সবসময় সন্দেহের চোখে তাকায়।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি যেন লাইনের মধ্যে দু পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমার একটি পা আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে আর অন্যটি আমেরিকান অমুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এ দুয়ের মধ্যে অনেক সুযোগ রয়েছে কিন্তু একই সাথে আমি নিজেকে অনেক বেশী একা মনে করি।’
লাউরেন আর্নল্ডের ইসলাম ধর্মের ভ্রমণ শুরু হয়েছিল আজ থেকে আরো ১৬ বছর পূর্বে কিন্তু তার মতে তার ভ্রমণ অতটা সহজ ছিল না।
তিনি ইসলামের সাধারণ শিক্ষা সমূহ অনলাইন থেকেই লাভ করেছিলেন। তিনি অনলাইনে ভিডিও দেখার মাধ্যমে সালাত আদায় করা শিখেছিলেন।
তিনি স্মৃতি চারণ করে বলেন, ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী একটি মসজিদের বাহিসে যখন কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজার সালাত আদায় করা হয় তখন এতে স্বাভাবিক ভাবে অংশ গ্রহণ করতে তার বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল কিন্তু একই সাথে তিনি সেখানে অনেক সময় কঠিন ব্যাবহারের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
কিন্তু বর্তমানে ১৬ বছর পর তিনি চূড়ান্ত ভাবে তার মনের মত করে একটি কমিউনিটি খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ভাল আচরণ এবং ভাল চরিত্র ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন বিশেষত ‘Makespace’ এ এসে আমি এমন অনেক লোকজন খুঁজে পেয়েছি যারা সত্যিকার অর্থেই ধর্মের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন। শিক্ষার পথ কিছুটা বক্র হয়ে থাকে কিন্তু ১৬ বছর পর আমি আমার নিজের পথ খুঁজে পেয়েছি।’
সূত্র: npr.org
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন