প্রশান্তের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েই দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মোদী!
পড়াশোনায় ভালো করতে চাইলে কোচিং সেন্টারের বিকল্প নেই- এমন ভাবনা এখন শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার। ছাত্র মেধাবী হলেই যে জিপি-৫ পাওয়া যায় না, যেতে যে হয় কোচিং সেন্টারে এ কথা অস্বীকার করার সাহস আজকাল কম মানুষেরই আছে। কিন্তু এ কেমন কোচিং সেন্টার, যেখানে ভর্তি হন রাজনীতিবিদেরা। যে কোচিং সেন্টারে শুধু রাজনীতিবিষয়ক শিক্ষাই দেয়া হয়।
হ্যাঁ, ভারতের বিহার রাজ্যে প্রশান্ত কুমার নামের এক ব্যক্তি এমন কোচিং সেন্টার চালু করে তাক লাগিয়েছেন বহু আগেই। বিশেষত তার পরামর্শে বিভিন্ন সময় ভোটের মাঠে ভেলকি দেখিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তার কোচিং সেন্টারটির নাম ‘ইন্ডিয়া পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি’।
প্রশান্তর এই কোচিং সেন্টারে কে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেননি- সেই নামগুলোই এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। গুজরাট, বিহার, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ—কোথায় নেই প্রশান্তের ছাত্র। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার, কংগ্রেসপ্রধান রাহুল গান্ধী, পাঞ্জাবের কংগ্রেস নেতা কাম মুখ্যমন্ত্রী অমেরেন্দ্র সিং আর হালের চমক অন্ধ্রের জগন (জগমোহন রেড্ডি) এর মতো রথী-মহারথীরাও তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন।
২০১২ সালের কথা। গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনে হালে পানি পাচ্ছিলেন না তখনকার মুখমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রশান্তই তখন মোদীর গুজরাট বিধানসভা ভোটের হাল ধরেন। এবং শেষ পর্যন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে হারতে বসা মোদীকে ও তাঁর দল বিজেপিকে দারুণভাবে জিতিয়ে দেন প্রশান্ত। এর পর তো এই প্রশান্তর কৌশল ও পরিকল্পনা মাফিক টানা দুবার প্রধানমন্ত্রীও হলেন মোদী।
১৯৭৭ বিহারে জন্ম নেয়া প্রশান্ত চাকরি করতেন জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতে। এক সময় চাকরি ছেড়ে ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিস্ট (নির্বাচন কৌশলী) হিসেবে কোচিং সেন্টার খুলে সাড়া ফেলে দেন রাজনীতিক অঙ্গনে। এরপরই মোদী প্রশান্তর শরণাপন্ন হয়ে শিখেন কীভাবে সাংবাদিকদের ফেস করতে হয়। এই প্রশান্তই মোদীকে শেখান কীভাবে হাসিমুখে সাংবাদিকদের অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হয়।
বর্তমানে ভারতে ‘ভোটগুরু’ অভিধা পাওয়া প্রশান্ত ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ছিলেন মোদীর নির্বাচনী উপদেষ্টা হিসেবে। ওই সময় মোদীর নির্দেশ মোতাবেক প্রশান্তর সব কথা ও পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বিজেপি। এমনকি বিজেপি সভাপতি খোদ অমিত শাহও প্রশান্তর শরণ নিয়েছিলেন।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তপসিয়ায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে বৈঠকও করেও প্রশান্তর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দানা বাঁধেনি। ওই বছরই প্রশান্তর রাজনৈতিক কৌশল ও ভোট পরিকল্পনা অনুসরণ করে অনেক বছর পর পাঞ্চাবে কংগ্রেসকে ক্ষমতার মুখ দেখান পাঞ্জাব কংগ্রেসপ্রধান অমেরেন্দ্র সিং।
পরের বছরই ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী রাজনৈতিক কৌশলের দায়িত্ব নিলে ভোটের মাঠে ঝড় তুলেছিল কংগ্রেস। ১১৭টি আসনের মধ্যে ৭৭টিতে জিতে নিয়েছিল কংগ্রেস। তবে ওই সময় কংগ্রেসের অনেক নেতাই প্রশান্তকে মেনে নিতে পারেননি। কেউ কেউ তো রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছিলেন। ফলটাও তাই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের পক্ষে যায়নি। প্রশান্তর কথা না শোনায় অনেক আসনেই পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস। কারণ, মোদী ও নীতিশের সঙ্গে কাজ করে এই ভোটগুরু যতটা স্বাধীনতা পেয়েছিলেন কংগ্রেস তাকে ততটা স্বাধীনতা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আর সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনেও প্রশান্তর পরিকল্পনা মেনে খেল দেখিয়েছেন অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান জগন মোহন রেড্ডি। অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভায় ২৫টি আসনের সবকটিতেই জিতেছেন জগনের প্রার্থীরা। আর নরেন্দ্র মোদী তো বিজেপির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার শপথই নিতে যাচ্ছেন। যেখানে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৫২টি আসন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন