ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনায় কারচুপি রুখতে এক ছাতায় জোট বেঁধেছে দেশটির ২২টি বিরোধী দল। বুথফেরত জরিপ শাসক দল বিজেপির জয়ের আভাস দিলেও আশা জিইয়ে রাখছেন বিরোধীরা। বিজেপিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে একাট্টা হয়েছে মোদিবিরোধী দলগুলো।
মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাব অব ইন্ডিয়াতে টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে বৈঠকে বসে ২২টি দল। ঘণ্টাখানেকের বৈঠক শেষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দেন নেতারা।
ভোট গণনায় কারচুপি রুখতে আগেই ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রায়াল) পরীক্ষার দাবি জানান তারা। একই দিন ভোটিং মেশিন কারচুপির শঙ্কায় কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা রাঘব চাড্ডা।
এনডিটিভি জানায়, মোদিবিরোধী জোটের বৈঠকে উপস্থিত ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সপা, বিএসপি, ডিএমকে, সিপিআই, সিপিএম, এনসিপিসহ ২২ দল। তৃণমূলের তরফে বৈঠকে যোগ দেন ডেরেক ও’ব্রায়ান।
কংগ্রেসের পক্ষে ছিলেন অশোক গেহলট, আহমেদ প্যাটেল ও গোলাম নবি আজাদ। এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, বিএসপির সতীশ মিশ্র, সপার রামগোপাল যাদব এবং সিপিএম’র সীতারাম ইয়েচুরিও হাজির ছিলেন বৈঠকে। বৈঠক শেষে প্রতিটি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেয় ২২ বিরোধী দলের জোট।
স্মারকলিপিতে আবেদন করা হয়, প্রতি পাঁচটি ইভিএম’র জন্য যে একটি ভিভিপ্যাট নির্ধারিত করা আছে, তার স্লিপ যেন ভোট গণনা শুরুর আগেই মিলিয়ে নেয়া হয়। যদি কোনো ত্রুটি ভিভিপ্যাটে ধরা পড়ে, তাহলে যেন সেই কেন্দ্রের সব বুথের ভিভিপ্যাটের ১০০ শতাংশ স্লিপই গণনা করা হয়।
কমিশনের তরফে বিরোধীদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, সারা দেশের প্রতিটি স্ট্রং রুমে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে ভিভিপ্যাট এবং ইভিএমগুলো। এজন্য মোট ৯৩টি বৈঠক করা হয়েছে কমিশনের তরফে।
কোথাও কোনো গাফিলতি বা ত্রুটি ধরা পড়লে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং যে অফিসার এজন্য দায়ী থাকবেন, তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। যে ভাইরাল ভিডিও দেখে বিরোধীরা ইভিএম লুটের অভিযোগ করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনে নিজেদের বক্তব্য জানানোর পর কংগ্রেস নেতা গোলাম নবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট ভোট গণনার আগেই ভিভিপ্যাট যাচাই করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার পর ভিভিপ্যাট যাচাই করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি, আগেই ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকালে আমাদের সঙ্গে ফের কথা বলার জন্য সময় চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
সকাল থেকেই ইভিএম নিয়ে সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। উত্তর প্রদেশ ও বিহারের বেশ কয়েকটি জায়গায় স্ট্রং রুমে সন্দেহজনক গতিবিধির ভিডিও ফুটেজ সামনে আসার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। মোবাইল ফোনে তোলা ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের চান্দৌলিতে তোলা।
এতে দেখা যাচ্ছে, গণনা কেন্দ্রের মধ্যে একটি গাড়ি থেকে ইভিএমগুলো নামানো হচ্ছে। তারপর সেগুলোকে একটি ঘরে রাখাও হচ্ছে। ভিডিও যিনি তুলেছেন, তিনি সমাজবাদী পার্টির সমর্থক। তার কণ্ঠ ধরা পড়েছে ভিডিওতে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় সপা এবং বসপা’র কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে জেভিএম কর্মীরা একটি ইভিএমবোঝাই ট্রাক জোর করে আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিভাগীয় কমিশনার পৌঁছে তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ভোটবন্দি ইভিএম আগেই কমিশনে পাঠানো হয়েছে গণনার জন্য। খালি ইভিএমগুলো ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এদিকে মঙ্গলবার রাতেই বদলে দেয়া হবে ভোটিং মেশিনের তথ্য, নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ অভিযোগ করেন দক্ষিণ দিল্লির আম আদমি পার্টির প্রার্থী রাঘব চাড্ডা।
চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, রাতেই ইভিএম কারচুপি করার চেষ্টা চলবে। এ নিয়ে তার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে বলে দাবি করেন রাঘব। ২০১৭ সালের পুর নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘পুর নির্বাচনের সময় দক্ষিণ দিল্লিতে স্ট্রং রুমে ঢুকে সিল ভেঙে ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল। সেই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করুক নির্বাচন কমিশন।’
ইভিএমে কারচুপি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ভোটারদের মত নিয়ে কারচুপি করার ব্যাপারে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা নিয়ে আমি চিন্তিত। ইভিএমের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায় নির্বাচন কমিশনের।’
প্রণব মুখার্জি আরও বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তি হল, যেখানে-সেখানে কোনো রকম জল্পনার অবকাশ থাকতে পারে না। জনাদেশ হল পবিত্র এবং তার অবস্থান বিন্দুমাত্র সন্দেহের ঊর্ধ্বে। দেশের প্রতিষ্ঠানের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাসী একজন হিসেবে আমার মত, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করবে, তা নির্ভর করে কারিগরদের ওপর।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন