ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি আছেন আগের মতোই
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং রবিবার গিয়েছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি এখানে পড়াশোনা করেছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশে আসলেও তিনি রয়ে গেছেন সেই আগের সহপাঠীর মতোই। এমনটাই জানালেন তার প্রাক্তন বন্ধু, সহপাঠি ও শিক্ষকরা।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার বক্তৃতায় এমনটা উল্লেখ করেন। তিনি এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
২৮তম ব্যাচের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে বিদেশী কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
২০১৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দল জয়লাভ করে। পরে ডা. লোটে শেরিং নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। বন্ধুদের সাথে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের লক্ষে ২০ বছর পর তিনি ময়মনসিংহে এসেছেন।
তিনি অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, একজন ভালো চিকিৎসক হতে হলে প্রথমে তাকে ভালো মানুষ হতে হবে। আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার পেশাকে ছেড়ে নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে আমি ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। আজ আমি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের স্মৃতিচারণ করে আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে আরো বলেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমি ও আমার সহপাঠি বর্তমান ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজিসহ ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে ২০ নম্বর কক্ষে থেকেছি। এখনো একসাথে আমরা রাজনীতি করছি। এ র্দীঘ সময়ে আমাদের মাঝে কোনদিন কোন মনোমালিন্য হয়নি। আজকে তার কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সকল ভোদাভেদ ভুলে ঐক্য বদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন সময়ের ঘটনা নিয়ে অনেকের নাম উল্লেখ করে ডা. লোটে শেরিং আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অডিটরিয়ামে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রবিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহে পৌঁছালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাগত জানায়। তার সহপাঠিরা ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী লায়োনপু দিহেন ওয়াংমু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সহর্ধমিনী ডা. উগেন ডেমা, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ন মজুমদার, ময়মনসিংহ বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভুইয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বিভিন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।
তার আগমন উপলক্ষে মেডিকেল কলেজসহ আমপাশের বিভিন্ন এলাকায় বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন