জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) থেকে সিরিয়াকে পরিপূর্ণভাবে মুক্ত করার দাবি করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ)।
দীর্ঘ ৫ বছর যুদ্ধের পর এই সফলতা আসল বলে জানিয়েছে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ সামরিক জোটটি।
এসডিএফের যোদ্ধারা আইএসের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি বাগুজ জয়ের পর শুক্রবার সেখানে বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন।
২০১৪ সালে সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গকিলোমটারের বেশি এলাকার দখল নিয়ে কথিত খেলাফত ঘোষণা করেন আইএসের প্রধান নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। সিরিয়ার রাকাকে রাজধানী করে কার্যক্রম চালাতে থাকেন এই কথিত খলিফা।
এরপরই গোষ্ঠীটি গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও এর আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তাদের শাখা বিস্তার লাভ করে নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও ফিলিপাইনে।
ইরাক থেকে আগেই আইএস বিতাড়িত হয়েছে। শনিবার এসডিএফ টুইটে দাবি করে, সিরিয়াও এখন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর রাহুমুক্ত। কিন্তু, বাকি দেশগুলোতে আইএস ছড়িয়ে থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নিরাপত্তা হুমকি রয়েই গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে শুক্রবার এসডিএফের মিডিয়া অফিসের প্রধান মুস্তফা বালি টুইট করেন, ‘বাগুজে আইএসের সঙ্গে ভারী গুলিবিনিময় চলছে। দ্রুতই তারা সেখানে ধ্বংস হয়ে যাবে।’
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বরাতে শুক্রবার বলেছে, বাগুজ জয়ের পর সিরিয়ার কোনো ভূখণ্ডেই আর আইএস নেই।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শাহনাহান ফ্লোরিডায় বিমান বাহিনীর কর্মসূচিতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ সফলতার বিষয়ে ব্রিফ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খেলাফত দাবি করা হয়েছিল, তা চিরতরে ধ্বংস করা হয়েছে। সিরিয়া থেকে আইএস সদস্যদের শতভাগ বিতাড়িত করা হয়েছে।’
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর বাগুজ। এটি ইরাকের সীমান্তে। চলতি মাসের শুরুতে সেখানে এসডিএফ অভিযোনে যায়। তবে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে আইএসের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছিল।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আগ্রাসন চালায়। এরপর ২০০৬ সালে সেখানে আল-কায়েদার সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক (আইএসআই)। আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতারাই এটির নেতৃত্বভার নেন।
সর্বপ্রথম ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আক্রমণ করে বড় ধরনের সফলতা পায় আইএস। সে সময়ে রাজধানী থেকে পাশ্চাত্যের অনুগত পাহাড়ি নেতাদের তাড়িয়ে দেয় তারা এবং রাজধানীতে গেড়ে বসা মার্কিন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পোস্টও গুড়িয়ে দেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় আইএস ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে নেয় এবং একের পর এক হামলা চালিয়ে বিভিন্ন এলাকার দখল নিতে থাকে।
এক পর্যায়ে ২০১০ সালে আইএসআই’র প্রধান নিযুক্ত হন আবু বকর আল-বাগদাদি। দুই বছর পর তিনি সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেন এবং সিরিয়ার দিকে নজর দেন। ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকার দখল নিতে থাকলে শুরু হয় যুদ্ধ। তবে, শুরুতেই তারা ভারী সমরাস্ত্র হাতে পাওয়ায় প্রভাব বিস্তারে সুবিধা পায়।
২০১৪ সালে এসে আইএস সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সেই থেকে যুদ্ধ চলে আসছে।
ধারণা করা হচ্ছিল, আইএসের কথিত খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদি এই বাগুজ শহরেই রয়েছেন। কিন্তু, শহরটি দখলের পর এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়।
ফলে প্রাণ বাঁচাতে অথবা আটক এড়াতে তিনি হয়তো অন্য কোথাও পালিয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এর আগেই একাধিকবার খবর এসেছে বাগদাদি নিহত হয়েছেন।
তবে, প্রত্যেকবারই আইএস প্রমাণসহ ভিডিও বার্তা দিয়ে দেখিয়েছে, তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন