নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট-চার্চের দুটি মসজিদে গোলাগুলি হয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওই সময় মসজিদে গিয়েছিল এবং ঠিক যখন হামলার ঘটনাটি ঘটে তারা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। তবে ক্রিকেটাররা সবাই সুস্থ আছেন এবং তারা শনিবার দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
ক্রাইস্টচার্চ হামলা সম্পর্কে সবশেষ যা জানা গেছে
ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছে। ৪১ জন নিহত হয়েছেন আল নূর মসজিদে এবং ৭ জন মারা গেছেন লিনউড মসজিদের ঘটনায়। আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় মারা যান। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস। আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন একে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি দেশটির ইতিহাসের ‘কালো দিনগুলোর’ একটি।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা শোক ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।নিউজিল্যান্ডের পুলিশ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। ২০ এর কোঠায় বয়স - এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে শনিবার আদালতে হাজির করার কথা।
পুলিশের জিম্মায় আরো দুইজন রয়েছেন। আর আগে আটক করা একজন ‘এই ঘটনার সাথে জড়িত নন।’ পুলিশ বলেছে, আপাতত শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকবে। হামলার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা ওই মসজিদের দিকেই যাচ্ছিলেন যখন তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা পাশের একটি পার্কে ঢুকে পরেন। ১৬ই মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট বাতিল করা হয়েছে। শনিবার দেশে ফেরত আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
নিউ ইয়র্কের মসজিদে অতিরিক্ত নিরাপত্তা
নিউ ইয়র্কের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট শুক্রবার শহরের মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত অফিসার প্রেরণ করেছে। টুইটারে তারা লিখেছে, ‘সকল উপাসনালয়ের নিরাপত্তা এবং সকলে যেন নির্ভয়ে ধর্মীয় রীতি পালন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ তারা।
প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে নানা দেশে
বাংলাদেশের মত ভারত, পাকিস্তানেও পালিত হয়েছে প্রতিবাদ কর্মসূচি।
ক্রাইস্টচার্চ হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ
ক্রাইস্টচার্চ হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে বিক্ষোভ মিছিল করে মানুষ।
পোপ ফ্রান্সিসের শোক প্রকাশ
ক্রাইস্টচার্চ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, অর্থহীন সহিংসতায় প্রাণহানি এবং মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানো এক টেলিগ্রামের মাধ্যমে পোপ ফ্রান্সিস নিউজিল্যান্ডের সব নাগরিক, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেছে
একজন বন্দুকধারী, যিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং ২৮ বছর বয়সী ব্রেন্টন টারান্ট হিসেবে দাবি করেন, গুলি চালানোর ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করেন। গুলি চালানোর সময় তার মাথায় লাগানো ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায় আল নূর মসজিদে নারী, পুরুষ ও শিশুদের লক্ষ্য করে বন্দুকধারী গুলি চালাচ্ছেন। পুলিশ মানুষকে অনুরোধ করেছে যেন তারা এই ‘অত্যন্ত পীড়াদায়ক’ ভিডিওটি শেয়ার না করে।
ফেসবুক জানিয়েছে তারা বন্দুকধারীর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছে এবং ভিডিওটিও পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, হামলার আগে কট্টরপন্থী ও অভিবাসী বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন।
নিউজিল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে শনিবার আদালতে উপস্থিত করা হবে।
‘চাবি, জুতা ফেলেই জান বাঁচাতে দৌড় দেই’
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের অধিবাসী আফসানা আক্তার রিতু হামলার সময় মসজিদের ভেতরেই ছিলেন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আফসানা আক্তার রিতু সেই ভয়াবহ হামলার বিবরণ দেন।
ঘটনার সময় তারা তিনজন বাংলাদেশী নারী একসাথে ছিলেন।
‘আমরা মসজিদের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ করে একটা শব্দ পাই। আমরা শব্দ শুনে দৌড়াদৌড়ি করে বাইরে আসি।’
‘যারা গুলি করছিল, ওরা প্রথম মহিলাদের রুমে আসেনি, ওরা প্রথম গিয়েছিল পুরুষদের রুমে। আমরা তিনজন বাংলাদেশী এক সাথে ছিলাম। তিনজনই একসাথে দৌড় দেই।’
‘আমাদের বাসা একদম মসজিদের পাশে। বাসায় আসতে এক মিনিট লাগে। গোলাগুলির শব্দ শুনে আমরা দৌড়ে বাসার দিকে আসি। কিন্তু বাসার চাবি, জুতা এইগুলা মসজিদে রেখে আসছি। জান বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আসি।’
সূত্র বিবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন