জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার বদলার দাবিতে ফুটছে গোটা ভারত। কিন্তু, এই হামলায় বাবলু নামে যে জওয়ান নিহত হয়েছেন, তার স্ত্রী মিতা বদলা চান না, যুদ্ধ সমাধান নয় বলে তার মত।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, শনিবার তখনও এসে পৌঁছয়নি তার স্বামীর কফিনবন্দি দেহ। সকাল থেকে বাউড়িয়ার চককাশী রাজবংশীপাড়ায় ভিড়। ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠছে, ‘বাবলু সাঁতরা অমর রহে’। দাবি উঠছে দোষীদের শাস্তির।
তার মধ্যেই মুখ খুললেন মিতা, পুলওয়ামায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান বাবলুর স্ত্রী তিনি। বলেন, ‘যুদ্ধে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি না। যুদ্ধে আরও মায়ের কোল খালি হবে। সরকারের উচিত সমাধানের পথ খোঁজা। তবে, যুদ্ধের মাধ্যমে নয়।’
হামলার প্রতিবাদে ঝড় উঠছে সর্বত্র। কার্গিল-যুদ্ধে বাবাকে হারানো গুরমেহর কৌর আগেই বলেছিলেন, ‘আমাদের আসল শত্রু যুদ্ধ।’ শুক্রবার ফের টুইট করেন, ‘দেশবাসীকে তাতানো চলছে। হামলার চক্রটা বন্ধ হওয়া দরকার।’
দু’দিন আগে স্বামীকে হারানো মিতাও বললেন, ‘যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়।’
পুলওয়ামার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নদিয়ার পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়া গ্রামের সুদীপ বিশ্বাসও। এদিন সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে দুই জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় পৌনে চারটে নাগাদ।
বাবলুর মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একটি কফিন কাঁধে করে নামান। বিমানবন্দরের ৪ নম্বর ভিআইপি গেটের সামনে ছাউনিতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে তখন।
সিআরপিএফের তরফে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়। তিন বাহিনী শ্রদ্ধা জানায়। পুলিশকর্তা, মন্ত্রীরাও ফুল-মালা দেন।
এদিন চককাশীর সর্বত্র উড়েছে জাতীয় পতাকা। অনেক বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। খোলেনি দোকান-বাজার। সকাল থেকে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। তারা একবার বাবলুর কফিন ছুঁতে চান। কফিন এসে পৌঁছয় সাড়ে ছ’টা নাগাদ।
বাড়ির সামনের মাঠে সিআরপিএফের তরফে ‘গান স্যালুট’ দেয়া হয়। বিদায় জানানো হয় নিহত সেনানীকে।
মিতা আগেই বলেছিলেন, ‘শুনেছি, ওদের কনভয়ে নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল। ঠিক-ভুল জানি না। তবে, স্বামীর ইউনিট ছাড়া এদিন বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমি সামান্য বেতনে বেসরকারি স্কুলে পড়াই। মেয়েকে নিয়ে চলাটাই এখন চিন্তার। সরকার কিছু করুক।’
প্রয়োজনে তিনি সেনাবাহিনীতেও নাম লেখাতে রাজি বলে জানিয়েছেন মিতা। তার প্রশ্ন, ‘সবাই যদি পিছিয়ে যায়, দেশরক্ষা করবে কারা?’
সুদীপের দেহ তিলিপাড়ায় পৌঁছয় রাতে। পরের ছুটিতে এসে যে মাঠে বন্ধুদের নিয়ে ক্রিকেট খেলবেন বলে গিয়েছিলেন ওই যুবক, সেখানেই মঞ্চ করা হয়েছিল। এক দিকে টাঙানো জাতীয় পতাকা। অন্য কোণে গ্রামবাসীদের পোস্টার— ‘আমরা তোমাকে ভুলব না’।
বিমানবন্দর থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মৃতদেহ নিয়ে কনভয় আসার সময় রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। জায়গায়-জায়গায় গাড়ি থামিয়ে কফিনে পুষ্পস্তবকও দেয়া হয়। কফিন পৌঁছনোর পরে ‘গান স্যালুট’ দেয় জেলা পুলিশ।
এখানেও গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে রান্না হয়নি। বাড়িতে পাথরের মূর্তির মতো বসেছিলেন সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বাবু। আর হাহাকার করছিলেন মা মমতা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন