পোপ ফ্রান্সিসের উদারপন্থী মনোভাবের সমালোচনা করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের কট্টরপন্থী ধর্মগুরুরা। তাদের দাবি, পোপ ফ্রান্সিস বিভ্রান্ত। তিনি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের বিভ্রান্ত করছেন। ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে পদচ্যুত ভ্যাটিকানের সাবেক এক উচ্চপদস্থ ধর্মগুরু রীতিমতো প্রচারপত্র প্রকাশ করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিস মিসরের আল আযহারের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েবের সঙ্গে এক যৌথ ইশতেহারে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। আগে থেকেই ক্ষুব্ধ কট্টর ক্যাথলিক ধর্মগুরুরা এই ঘটনায় আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ভ্যাটিকানের পদচ্যুত যে সাবেক উচ্চপদস্থ ধর্মগুরু প্রচারপত্র প্রকাশ করেছেন তার নাম কার্ডিনাল গেরহার্ড মুলার (৭১)। ২০১৭ সালে পদচ্যুতির আগ পর্যন্ত তিনি জার্মানিতে ‘কংগ্রেগেশন ফর দা ডক্ট্রিন অব দ্য ফেইথের’ প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার লিখিত ‘ম্যানিফেস্ট অব ফেইথ’ নামের প্রচারপত্রটি আগেই বিভিন্ন খ্রিস্টান ধর্মীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে তারিখ লেখা ১০ ফেব্রুয়ারির। ১০ ফেব্রুয়ারি সাবেক পোপ বেনেডিক্টের পদত্যাগ দিবস। কট্টরপন্থী খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা তাকে গভীরভাবে সম্মান করে।
কার্ডিনাল মুলারের ভাষ্য, এরকম একটি প্রচারপত্র লেখার জন্য তাকে বারবার অনুরোধ করে আসছিলেন অনেকেই। ‘ডকট্রিন অফ ফেইথের’ বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে তিনি প্রচারপত্রটি রচনা করেছেন। তার ভাষ্য, ‘ভ্যাটিকানের কিছু নেতা সেসব মানুষকে প্রকৃতপক্ষে ত্যাগ করেছেন যারা তাদের উপর আস্থা রেখেছিল। তারা বিশ্বাসীদের অবস্থান নড়বড়ে করে দিয়েছেন। তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন।’
‘ম্যানিফেস্ট অব ফেইথের’ কোথাও পোপ ফ্রান্সিসের নাম উল্লেখ করা নেই। কিন্তু সেসব কাজের সমালোচনা করা হয়েছে, যা পোপ ফ্রান্সিস করেছেন। আবার খ্রিস্টান ধর্মীয় এমন সব রীতিনীতিকে সমর্থন করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। এসবের মধ্যে রয়েছে যাজকদের কৌমার্য মেনে না চলার শর্ত থেকে শুরু করে নারীদের ধর্মগুরুর পদে নিয়োগ দেওয়ার মতো বিষয়।
মুলার ভ্যাটিকানের সেসব কট্টরপন্থী ধর্মগুরুদের একজন যারা প্রকাশ্যে পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে দিকভ্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তারা মনে করেন, পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক ধর্মের নীতিগত অবস্থানকে দুর্বল করে ফেলছেন। তিনি সমকামিতা ও বিবাহবিচ্ছেদের মতো বিষয়গুলোকে হালকাভাবে দেখেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেন।
বিশ্বভাতৃত্ব নিশ্চিতের যে যৌথ ইশতেহারে স্বাক্ষর করেছেন পোপ ফ্রান্সিস তাতে আরও বেশি চটেছেন রক্ষণশীল ক্যাথলিক ধর্মগুরুরা। তাদের বিশ্বাস, ‘ইসলামের মূল লক্ষ্য পশ্চিমকে ধ্বংস করা।’ পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া ধর্মগুরুদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক মার্কিন ধর্মগুরু, যার নাম রেমন্ড লিও বার্ক । তাকে ২০১৪ সালে ভ্যাটিকানের শীর্ষস্থানীয় একটি পদ থেকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন