যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের বেশির ভাগ দেশেই ধর্মীয় স্বাধীনতা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সন্নিবেশিত আছে- ‘কংগ্রেস শুধুমাত্র কোনো একক ধর্মীয় আবহে তার আইন প্রণয়ন করবে না অথবা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু চিন্তাশীল মুসলিম এখানকার ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি বুঝতে সক্ষম এবং তারা নিজেদের বিশ্বাস এ বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে চান যে,যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্ম ঠিক কতটা স্বাধীনতা ভোগ করে।
সপ্তম শতাব্দীতে যখন আরবে ইসলামের যাত্রা শুরু হয় এবং এর পরেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন এই ধর্ম টিকে তখনকার প্রভাবশালী ধর্ম খ্রিস্টানিটির মোকাবেলা করতে হয় এবং ইসলাম তা যথাযথ ভাবেই পেরেছে।
ইসলাম খুব তাড়াতাড়িই জিজিয়া কর নামে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘নিরাপত্তা’। আর এই জিজিয়া কর প্রদান করতে হত ইসলামিক শাসন ব্যবস্থায় বসবাসরত অমুসলিম নাগরিকদের যাতে করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং একই সাথে তাদেরকে শুধুমাত্র সমান সুযোগ সুবিধাই দেয়া হয় নি বরং তাদেরকে ইসলামি শাসন ব্যবস্থায় মুসলিমদের মত করেই সমান চোখে দেখা হত।
যেসকল দেশ বা ভূমিতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল সেইসকল দেশে মুসলিমগণ ইসলামকে তাদের জাতীয় ধর্ম মনে করতে থাকেন এবং তারা স্থানীয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যেমন, জুড়াইজম এবং খ্রিস্টানিটি এর অনুসারীদের সাথে একসাথে বসবাস করতে থাকেন।
তবে ইসলামের এই ছড়িয়ে পড়ায় ধর্মটি ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ ভারত এবং পাকিস্তানের আহমদিয়া মুসলিম আর ইরানের বাহাই অনুসারীগণ মূল মুসলিমদের সবসময় জ্বালাতন করে আসছে।
এত কিছু সত্ত্বেও ইসলাম সবসময় সহনশীল একটি ধর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ধর্মে কোনো জোর জবর-ধস্তি নেই।’ আর মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম,আমার জন্য আমার ধর্ম।’
কিন্তু সত্যিকার অর্থে মাঠ পর্যায়ে যা ঘটে থাকে,এখানে বলতে গেলে আমাদেরকে এ কথা অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে,আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ একেবারেই পক্ষপাত পূর্ণ।
এখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা বিপত্তি আসে, জনগণ প্রস্তাবিত মসজিদ নির্মাণে বাঁধা দেয় এমনকি অনেক মসজিদে ভাংচুর চালানো হয়।
তবে একথাও মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে চার্চ এবং সিনাগগসের মত অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে মসজিদও করের আওতামুক্ত। বিভিন্ন চার্চে দান করার মতই মসজিদে যেকোনো ধরনের দান করা যুক্তরাষ্ট্রের Internal Revenue Service(IRS) এর আওতামুক্ত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ যতই ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করুক না কেন আমরা অনেক সময় গণমাধ্যম গুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ব্যাপারে শুনে থাকি, এমনকি কিছু কিছু সময় বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণ আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন।
কিন্তু এখানকার নাগরিকগণ আসলে এ বিষয়টি নিয়ে ঠিক কি ভাবেন তা এখানকার বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা দ্বারা বুঝতে পারি। আমরা দেখেছি হাজার হাজার মুসলিম জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, ন্যাদারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য পাড়ি জমাতে চান। অবশ্য অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে আসতে চান।
কোনো খ্রিস্টান পাকিস্তান,সৌদি আরব কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি দিতে চান এমনটি আমরা কখনো ঘটতে দেখি না। আমি লোকেদের অভিবাসী হওয়ার এ ধরনের অসমতাকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করতে চাই না।
সূত্রঃ goshennews.com এ প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় অবস্থিত গোশেন কলেজের দর্শন এবং ধর্মীয় বিভাগের অধ্যাপক মার্লিন জেসচকে এর কলাম থেকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন