সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করে বুধবার সারাদেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর থেকে আইএএস পরীক্ষায় শীর্ষ স্থান অধিকারী শাহ ফয়জল। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা সরাসরি না জানালেও পদত্যাগের বিবৃতিতে আগাগোড়া রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছিলেন কাশ্মীরের এই ইয়ুথ আইকন।
বৃহস্পতিবার অবশ্য শাহ ফয়জল স্পষ্ট ভাষায় জানান, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবেন কাশ্মীরিরাই। এ জন্য ফেসবুক, টুইটারের বাইরে বেরিয়ে শ্রীনগরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানালেন ফয়জল।
বুধবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানানোর পাশাপাশি শাহ ফয়জল জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানাবেন নিজের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা।
সেই বিবৃতিতে ফয়জল লিখেছিলেন, ‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদের হত্যা করার প্রতিবাদে, কেন্দ্রের তরফে কোনও সদর্থক আলোচনার উদ্যোগ না থাকার প্রতিবাদে, হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে ভারতের ২০ কোটি মানুষের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে ওঠার প্রতিবাদে, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে উগ্র জাতীয়তাবোধের নামে বাড়তে থাকা ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে আমি সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আনন্দবাজার বলছে, ফয়জলের এই বিবৃতি ঘিরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। পুরো ঘটনায় পৃথিবীর সামনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভারতের ভাবমূর্তি, এই মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। ফয়জলের ফেসবুক পেজেও শেয়ার, কমেন্ট আর লাইকের পরিমাণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এর পরই বৃহস্পতিবার ফের ফেসবুকে মুখ খুললেন ফয়জল। যদিও এবার ফেসবুক, টুইটার থেকে বেরিয়ে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে শ্রীনগরের রাস্তায় দেখা করার আহ্বান দিলেন তিনি।
ফেসবুকে তিনি লিখলেন, ‘আমার ওপর দিয়ে গালাগালির ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ হাজার রকমভাবে আমার পদত্যাগের সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এটা প্রত্যাশিতই ছিল। চাকরি ছাড়ার পর কী করব, সেই সিদ্ধান্ত এখন নেবেন কাশ্মীরিরাই। সেটা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আমি কিছুটা ভেবেছি। আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের মানুষের সঙ্গে মিশতে চাই। শ্রীনগরের রাস্তায় এসে আপনারা সরাসরি আমাকে পরামর্শ দিন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাদের পরামর্শ নিতে চাই আমি।’
শুক্রবার শ্রীনগরের রাস্তায় দেখা করার আহ্বান দিলেও কিছুক্ষণ পরই অবশ্য তা বাতিল করে দিয়েছেন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ফয়জল। শ্রীনগরে আবহাওয়ার পূর্বাভাস খারাপ হওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিজের ফেসবুক পোস্টে কাশ্মীরের যুবকদের মতামতের বিষয়টিকে অবশ্য অগ্রাধিকার দিয়েছেন ফয়জল। বুধবার উপত্যকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল, ন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেন ফয়জল। আগ বাড়িয়ে তাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
এমনও শোনা যাচ্ছিল, বারামুলা কেন্দ্র থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্সের হয়ে ভোটে দাঁড়াতে পারেন ফয়জল।
বৃহস্পতিবার অবশ্য নিজের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কাশ্মীরের যুবকদের ওপর ছে়ড়ে দিয়ে কিছুটা অন্য বার্তা দিলেন ফয়জল, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন