সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে আফগান নারী ফুটবলারদের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি। তালেবান যুগের অবসানের পর ঘর ছেড়ে বাইরে আসতে শুরু করেছে আফগান নারীরা, বিশেষ করে তরুণীরা। দেশটির নারীদের মুক্তি একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির নারী ফুটবল দল। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াকে কেন্দ্র করেই নাকি এসব ঘটনার বেশিরভাগ ঘটেছে!
বিশ্বজুড়ে এমন সাহসিকতার প্রশংসাই হচ্ছিল সব মহল থেকে কারণ জঙ্গি কিংবা রক্ষণশীলদের ভয় তাড়িয়ে মাঠে নেমেছে মেয়েরা। কিন্তু এর মধ্যেই হানা দিয়েছে দুঃস্বপ্ন। দেশটির পদস্থ ক্রীড়া কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে নারী খেলোয়াড়দের কয়েকজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর এটা শুধু ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নেই বরং দু:স্বপ্নটি গ্রাস করতে শুরু করেছে অন্য খেলাকেও।
যদিও বেশির ভাগ নারী খেলোয়াড়রই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেননা বিশেষ করে কোচ কিংবা অন্য কর্মকর্তাদের দ্বারা হেনস্থার বিষয়ে। তবে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ই গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যেই ফিফা জানিয়েছে, জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। পরে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকেও ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়।
সোমবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি নিজেও। তার মতে প্রতিটি আফগান নাগরিক এ খবরে দারুণ কষ্ট পেয়েছে। তিনি বলেছেন, 'এমনকি সামান্য কোনো অভিযোগও যদি মানুষকে তার ছেলে বা মেয়েকে খেলাধুলায় না পাঠাতে উৎসাহিত করে সে বিষয়েও আমাদের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে'।
ড্যানিশ প্রতিষ্ঠান হামেল ইতোমধ্যেই আফগান ফুটবল ফেডারেশনের স্পন্সরশিপ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সায়েদ আলিরেজা আকাজাদা ও তার সভাপতি কেরামুদ্দিন করিম। যদিও তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি মেয়েদের যৌন হয়রানির কোনো ঘটনাটিই ঘটেনি।
সোমবার পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই বিষয়টি উঠে এসেছে। এরপর আরও বিস্ময়কর বক্তব্য দিয়েছেন আফগান অলিম্পিক কমিটির প্রধান হাফিজুল্লাহ রাহিমি। তিনি বলেছেন, 'যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এটা শুধু ফুটবলেই নয় অন্য ফেডারেশনগুলোতেও। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে'।
অভিযোগের বেশিরভাগই এসেছে আফগান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পপালের কাছ থেকে। তালেবান আমলে কিশোরী বয়সে ফুটবল খেলতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তিনি। পরে মৃত্যুর হুমকি পেয়ে দেশ ছেড়ে ডেনমার্কে বসবাস করতে শুরু করেন পাপেল। তিনি জানান, কোচ ও ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের দ্বারা নারী খেলোয়াড়দের শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হতে দেখেছেন। অনেক মেয়েই বিষয়টি তাকে জানিয়েছে।
তিনি বলেছেন, এ হয়রানির মধ্যে ধর্ষণ, যৌন স্পর্শ কিংবা হয়রানি সবই ছিল। দুজন কোচের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ সংগ্রহের পরেও কিছু না হওয়ায় তিনি হতাশ হন। তাদের শাস্তি দেয়ার বদলে প্রমোশন দেয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন