সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্র সৌদি কর্তৃপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন ১৭ সৌদি সরকারি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ঘণ্টাখানেক পর সৌদি প্রসিকিউটর আনুষ্ঠানিকভাবে ১১ ব্যক্তিকে খাসোগি হত্যায় অভিযুক্ত করে এবং পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করার কথা বলে। মজার বিষয় হলো, নিষেধাজ্ঞা বা অভিযুক্তদের এই তালিকায় কিন্তু পরাক্রমশালী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নেই।
প্রায় একই সময়ে নেওয়া এই দুটি পদক্ষেপকে কোনোভাবেই কাকতালীয় বলা যায় না। দুটি পক্ষই আশা করেছে, তাদের সম্মিলিত এই পদক্ষেপ খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে যুবরাজ সালমানকে রক্ষা করবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। কারণ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) খাসোগি হত্যায় তাদের মূল্যায়নে বলেছে, হত্যার নির্দেশদাতা হলেন যুবরাজ সালমান।
খাসোগি হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, গত মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে যুবরাজ সালমানের ব্যক্তিগত নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র হিদার নুয়ের্ট অবশ্য বলছেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অর্থেই কে জড়িত, সরকার সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখনো কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর’ পাওয়া যায়নি।
সিআইএর এমন বিস্ফোরক মূল্যায়নের পরও রিয়াদ প্রতিবারের মতো জোর দিয়ে বলছে, খাসোগি হত্যায় যুবরাজ সালমান জড়িত নন। কিন্তু খাসোগি হত্যায় সর্বশেষ পাওয়া তথ্য যদি সত্যি হয়, তবে তা সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ট্রাম্পের বিশেষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সত্যিই বড় ধরনের ধাক্কা হবে।
যুবরাজ বলেছেন, খাসোগি হত্যায় তিনি কোনো ‘ভূমিকা পালন করেননি’। ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরব এই পর্যন্ত খাসোগিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার বেশ কয়েকটি বয়ান দাঁড় করিয়েছে। তাই দেশটি এখন যে পুরোপুরি সত্য বলছে, তা বিশ্বাস করাও কঠিন।
রিয়াদ প্রথমে বলেছে, তারা খাসোগির নিখোঁজের ব্যাপারে কিছুই জানে না। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ পর বৈশ্বিক চাপে সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেন, খাসোগিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সৌদি প্রসিকিউটর খাসোগিকে হত্যার নতুন এক বয়ান বা পদ্ধতির কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, অপহরণ চেষ্টার সময় ভুল করে দেওয়া প্রাণঘাতী ওষুধে (লেথাল ডোজ) খাসোগির মৃত্যু হয়।
সিআইএর মূল্যায়ন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির কর্মকাণ্ডকে ট্রাম্প সমর্থন করে যাচ্ছেন। শনিবার সিআইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আগেও সৌদি যুবরাজকে নির্দোষ বলে পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘যুবরাজ বলেছেন, খাসোগি হত্যায় তিনি কোনো ‘‘ভূমিকা পালন করেননি’’। সৌদি প্রকৃত অর্থেই আমাদের জন্য ভালো মিত্র ছিল। তারা আমাদের অনেক কাজ দিয়েছে, অনেক ব্যবসার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ করে দিয়েছে।’
খাসোগি হত্যায় সিআইএর মূল্যায়ন সর্বপ্রথম ওয়াশিটন পোস্টে প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এই মূল্যায়ন তুরস্ক সরকারের দেওয়া অডিও রেকর্ড ও অন্য তথ্য-প্রমাণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দেওয়া খাসোগিকে করা যুবরাজ সালমানের ভাই খালিদ বিন সালমানের ফোন কলের রেকর্ডও রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খালিদ ওই ফোনে খাসোগিকে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। একটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছে, খালিদ তার ভাইয়ের নির্দেশে খাসোগিকে ফোন করেছিলেন।
যদিও খালিদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ফোনালাপের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি এক টুইটে দাবি করেন, তিনি খাসোগির সঙ্গে ফোনে কখনোই কথা বলেননি এবং ‘খাসোগিকে কোনো কারণে তুরস্কে যাওয়ার পরামর্শ দেননি’।
এদিকে সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটন পোস্টের ওই মূল্যায়নকে মিথ্যা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক কোনো ভিত্তি ছাড়াই আমরা ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনায় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা শুনছি।’
খাসোগি হত্যা, একটি ভূরাজনৈতিক সমস্যা
কেবল যুবরাজ সালমান যে অপরাধী, ট্রাম্প এটাই খুঁজে পাবেন না। এখানে ভূরাজনৈতিক সমস্যার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে। খাসোগির মৃত্যুর পরপরই বিশ্বের বেশ কয়েকজন নেতা স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানান। তাদের ওই আহ্বান সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের আলোড়ন তৈরি করেছে। ফলে কানাডাসহ কিছু দেশ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আলোচনা করছে।
ইউরোসিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রধান ইয়াহাম কামেল বলেন, এই আলোড়ন তৈরি হওয়ার উদ্দেশ্য হলো, কিছু নেতা অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তির সৌদি আরব দেখতে চায়।
খাসোগিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার অডিও রেকর্ড তুরস্কের কাছে আছে। ছবি: সংগৃহীত
কামেল সিএনএনকে বলেন, সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক আছে তেমন পশ্চিমা দেশই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও একটি অস্থিতিশীল সৌদি চায়, অথবা তারা এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করতে চায়, যেখানে দুটি পক্ষ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যে এমন বহু সংঘাতপূর্ণ স্থান আছে এবং নেতারা চান না সৌদি এই তালিকায় যুক্ত হোক। কারণ ক্ষমতার ওই দ্বন্দ্ব সম্পর্কে পূর্বানুমান করা কঠিন এবং নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন।
যুবরাজ সালমান সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো প্রকৃত অর্থেই খারাপ হবে। এর আগে কখনো দেশটির কোনো যুবরাজকে এমন শক্তিশালী মনে হয়নি, ৩৩ বছর বয়সী যুবরাজ সালমান যত ক্ষমতাধর। তিনি দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেই করেন। নিজ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য তাই খাসোগি হত্যার প্রতিক্রিয়ায় যুবরাজ নিজেই দেশটির গোয়েন্দা সংস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন।
বিন সালমান নিজের কর্তৃত্ব জোরদার করার জন্য ইতোমধ্যে দেশে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোনঠাসায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বীয় ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। এর আগে ‘দুর্নীতিবিরোধী’ অভিযান হিসেবে বেশ কয়েকশ সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ীকে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে আটকে রাখেন যুবরাজ। এর মধ্য দিয়ে তিনি রিটজ কার্লটন হোটেলকে কারাগারে পরিণত করেন।
তার (যুবরাজ) পরিবারেই শত্রু আছে। কারণ সৌদি সিংহাসনের দাবিদার বেশ কয়েকজন যুবরাজকে ডিঙিয়ে তিনি সিংহাসন দখল করেন। তাই খাসোগি হত্যায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের যথেষ্ট সুযোগ করে দেবে।
স্ট্র্যাটফর নামে ভূরাজনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, যদি খাসোগি হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে না যায়, তবে যুবরাজকে তার পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের করায়ত্তে সৌদি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম থেকেই সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে রাজি নন। কংগ্রেস থেকে চাপ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি যুবরাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চান না। এমনকি এই সিদ্ধান্ত তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে গেলেও না।
ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক এবং সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বাস্তবায়নে খুবই আগ্রহী কুশনার। আর ওইসব নীতি সৌদির অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণ ও মোটা দাগে যুবরাজের সংস্কারকেন্দ্রিক।
খাসোগির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর সৌদি বাদশাহর সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়। ফোনালাপের পর ট্রাম্প খাসোগি হত্যায় সৌদি রাজ পরিবারের দেওয়া বয়ানকে শুধু বিশ্বাসই করেননি, তিনি সৌদির বয়ানকে সাংবাদিকদের সামনে তুলেও ধরেন এবং বলেন, দুর্বৃত্তরা সৌদি বাদশাহ ও তার ছেলেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এটাই ছিল সৌদি বাদশাহ ও তার ছেলেকে বাঁচাতে, এমনকি ট্রাম্পের সহযোগিতামূলক আচরণের প্রথম নিদর্শন।
তারপর তিনি (ট্রাম্প) পরিষ্কার করে বলেন, একজন সাংবাদিকের জীবনের জন্য এ রকম একটা লাভজনক অস্ত্র ও বাণিজ্য চুক্তি হুমকিতে পড়তে পারে না (তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সৌদির সঙ্গে করা চুক্তিগুলো কত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য)।
স্ট্র্যাটফরের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের ছত্রছায়ার কারণে সৌদি কর্তৃপক্ষ আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করেছে। আর এ কারণে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দায় নেই, এমন আচরণও করছে।
স্ট্র্যাটফর লিখেছে, রিয়াদ হিসাব-নিকাশ করে দেখেছে, বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের সাময়িক এই অবনতি তারা অতিক্রম করতে পারবে। অর্থাৎ খুব সহজেই সম্পর্কগুলো আবার ঠিক হয়ে যাবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ছত্রছায়ার কারণে সৌদি কর্তৃপক্ষ আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করেছে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বর্তমান সময়ের বিশেষ সম্পর্ক থেকে পাওয়া রাজনৈতিক সুবিধার ফলেই সৌদি তার দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখাচ্ছে এবং তার চর্চা করতে পারছে। আর পারস্পরিক প্রতিপক্ষ ইরানের ব্যাপারে হোয়াইট হাউজও সৌদি আরবের প্রচেষ্টার ওপর অনেকটা নির্ভর করে। এ ছাড়া ওয়াশিংটন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সৌদির সহযোগিতা চায়।
এই সুযোগে সৌদি তাদের সেই দৃঢ়চেতা মনোভাব মধ্যপ্রাচ্যের সমগ্র অঞ্চলে প্রদর্শন করছে, তা লেবাননের রাজনীতিতেই হোক, তুরস্কের কনস্যুলেট হোক বা ইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেই হোক। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, সৌদি যুবরাজ এই বাড়াবাড়ি পশ্চিমা কিছু দেশের সঙ্গেও করেছে। এ ক্ষেত্রে কানাডার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
যেমন, অটোয়া যখন কারাবন্দী অ্যাকটিভিস্টদের মুক্তির দাবি জানায়, তখন রিয়াদ অটোয়ার সঙ্গে তাদের নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্থগিত করে। কানাডায় বিমান চলাচল স্থগিত করে, সৌদিতে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে, কানাডা থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে, এমনকি কানাডায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয় সৌদি। এতে কানাডাও সৌদি যুবরাজের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়।
তুরস্কের সম্ভাব্য স্বার্থ
খাসোগি হত্যার পর সৌদির ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করেছে তুরস্ক। দেশটি বলেছে, খাসোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পরপরই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এবং তার মরদেহ গোপন করা হয়। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করে তুরস্ক।
তুর্কি কর্মকর্তারা খাসোগির মৃত্যুর পর রিয়াদকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তুরস্ক এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বলেছে, খাসোগিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তার অডিও রেকর্ড তাদের কাছে আছে। খুব সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ওই অডিও রেকর্ড পশ্চিমা কয়েকটি মিত্র দেশকে দেওয়াও হয়েছে।
তুরস্কের এই একটু একটু করে দেওয়া তথ্য সৌদি কর্মকর্তাদের তাদের বক্তব্য পরিবর্তনে বাধ্য করেছে এবং একসময় খাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে, তা স্বীকার করতে বাধ্য করে।
ইউরোসিয়ার কামেল বলেন, যে তুরস্ক নিজেদের বেলায় সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে খুবই কড়াকড়ি নীতি অবলম্বন করে, সেখানে অন্য কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্যই সৌদির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উদ্যোগী হয়েছে।
মক্কা, মদিনায় ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল মসজিদসহ বেশ কয়েকটি দেশে খাসোগির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কামেল বলেন, এই অঞ্চলের সুন্নি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় এই ঘটনাকে ব্যবহার করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে আঙ্কারা এবং রিয়াদ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তুরস্ক খাসোগি হত্যায় সৌদি জড়িত প্রমাণ করে আঞ্চলিক শক্তি প্রসারিত করতে চাচ্ছে।
মোহাম্মদ বিন সালমান বিদেশ নীতিতে যে এজেন্ডার সংযোজন করেছেন, তা আরও বেশি মাত্রায় আরবকেন্দ্রিক এবং তাতে শুধু ইরানের প্রভাব অন্তর্ভুক্ত নয়, তুর্কি প্রভাবও বিদ্যমান। তাই আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে সৌদিকে পুনর্বিবেচনা করা তুরস্কের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
খাসোগি হত্যায় আঞ্চলিক বা বিশ্ব রাজনীতি জড়িয়ে পড়লেও তার পরিবারের সদস্যরা এখনো আশা করছেন, তারা তাদের স্বজনের মরদেহের সন্ধান পাবেন। যদিও এরই মধ্যে গত শুক্রবার সৌদির মক্কা, মদিনা, তুরস্কের ইস্তাম্বুল মসজিদসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় খাসোগির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই গায়েবানা জানাজা এটাই মনে করিয়ে দেয় যে, ঘটনার পুরো সত্য এখনো উন্মোচিত হয়নি এবং কোনোদিনই বোধ হয় হবে না।
(সিএনএন থেকে ভাষান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন