যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তুর্কি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের নিকট হস্তান্তর করার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন, যাতে করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাংবাদিক খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরবের ওপর চাপ প্রয়োগ কিছুটা শিথিল করে, বার্তা সংস্থা এনবিসি নিউজ এমনটিই জানাচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এনবিসি নিউজকে বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসন খতিয়ে দেখছে বলে জানায়, কিন্তু তথ্যের সত্যতা বা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
এনবিসি নিউজ চারটি সূত্রের বরাত জানাচ্ছে যে, ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে দায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফেতুল্লাহ গুলেনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা যায় কিনা এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
তবে ফেতুল্লাহ গুলেনের গণমাধ্যম উপদেষ্টা আল্প আসলাদোগান বলছেন,ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে এ ধরনের তদন্ত হচ্ছে কিনা তাকে এ ধরনের কোনো সংবাদ জানানো হয় নি।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে দায়ী ফেতুল্লাহ গুলেন, যিনি ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছেন তাকে তুরস্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে এরদোগান ওয়াশিংটনের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এতদিন বলে আসছিলেন যে, ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে দেশটির আদালতের শক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে হত্যার পরে এরদোগান সৌদি সরকারকে দায়ী করছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের মিত্রদের মাধ্যমে সৌদির ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে আসছে।
অন্যদিকে সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য ইরানের প্রভাব কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এরদোগান জোর দিয়ে বলেছেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব জড়িত রয়েছে এবং এ জন্য তিনি পরোক্ষভাবে ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানকে দায়ী করে আসছেন। বিষয়টি প্রমাণ করতে বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। অনেক দেশে এর তথ্য-প্রমাণও পাঠিয়েছে তুরস্ক।
অপরদিকে হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘হোয়াইট হাউস এখনো পর্যন্ত জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের নিকট ফিরিয়ে দিতে কোনো ধরনের আলোচনায় অংশ নেয় নি।’
তুর্কি সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন,ফেতুল্লাহ গুলেনকে দেশে ফিরিয়ে দেয়া আর খাসোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দুটো একেবারে ভিন্ন বিষয়।
তবে এনবিসি নিউজ যুক্তরাষ্ট্রের এক সূত্র মোতাবেক জানতে পেরেছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের নিকটে ফিরিয়ে দিতে এফবিআইকে এ বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করতে বলেছে এবং ফেতুল্লাহ গুলেনের বর্তমান আইনগত অবস্থা জানাতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ওপর নির্দেশ জারি করেছে।
এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ফেতুল্লাহ গুলেনকে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানান্তর করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বিকল্প পথের সন্ধান করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিভাগের মুখপাত্র হেথার নাউরেত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফেতুল্লাহ গুলেনের বিষয়ে তুর্কির সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এ বিষয়টি পুরোপুরি বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করছে। তবে বিচার বিভাগ এবং এফবিআই এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে যে,গুলেনের বিষয়ে কোনো ধরনের তদন্তের ব্যাপারে তারা এখনো কিছু জানে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুলেনের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছে বলেও এনবিসি নিউজ জানতে পেরেছে।
সূত্রঃ রয়টার্স।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন