রাজার ইচ্ছেতে রাজতন্ত্র শিথিল হয়ে গণতন্ত্র এসেছে এমন উদাহরণ বিশ্বে খুব একটা নেই, থাকার কথাও নয়। কিন্তু ২০০৮ সালে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে এরকম এক উদাহরণ সৃষ্টি করে ছোট্ট দেশ ভুটান।
পৃথিবীর একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশটিতে গণতন্ত্র আনতে কোন বিক্ষোভ হয়নি, আন্দোলন হয়নি, কোন ভাঙচুর হয়নি, কোন রক্তও ঝড়েনি। ২০০৬ সালে রাজা জিগমে সিগমে ওয়াংচুক দর্জি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন। তার কথা ছিলো থিম্পুর সিংহাসনে কোন তরুণ রক্তরই বসা উচিৎ। ক্ষমতায় বসলেন তার অক্সফোর্ড পড়–য়া ছেলে জিগমে খেসার নামগেয়োল ওয়াংচুক। ক্ষমতায় বসেই খেসার ঘোষণা দিলেন পূর্ণাঙ্গ রাজতন্ত্র বিলোপ করে আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্র কায়েমের। প্রতিবেশি নেপালে গণতন্ত্র কায়েমে ঝড়েছে অনেক রক্ত। এরপরেও নেপালে কোন গণতান্ত্রিক সরকারই স্থায়ী হতে পারে নি। কিন্তু ভুটান সুবিশাল ব্যতিক্রম। ছোট্ট দেশটি পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই ব্যাতিক্রম। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩ বার সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। ৩ বারের নির্বাচনে ৩ বার ক্ষমতায় এসেছে ৩টি আলাদা দল।
ভুটানের সাধারণ নির্বাচনের পদ্ধতি বেশ আধুনিক এবং অন্যরকম। দেশটিতে ১ মাসের ব্যবধানে দু দফায় অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই দল অংশ নেয় পার্লামেন্টের আসন নির্ধারনি ২য় দফার নির্বাচনে। অর্থাৎ পার্লামেন্টে থাকে শুধুমাত্র ২টি দলের প্রতিনিধিত্ব। প্রথম দফাতেই ধরাশায়ি হয় ক্ষমতাসীন পিপলস ডেমোক্রেটিক পাটি (পিডিপি)। দলটি পায় ৭৯ হাজার ৮৮৩ টি বা ২৭.৪৪ শতাংশ ভোট। যথাক্রমে ৩১.৮৪ শতাংশ এবং ৩০.৯২ শতাংশ ভোট পেয়ে ২য় দফার জন্য উত্বীর্ণ হয় দ্রুক নিয়ামরুম সংপা এবং ভুটান পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি পার্টি।
গত ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ২য় দফার নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে ২০১৩ সালে গঠিত মধ্য-বাম রাজনৈতিক দল দ্রুক নিয়ামরুপ সংপা। ভুটানের রাজনীতিতে দলটি কিছুটা চীনপন্থী বলে পরিচিত। আর ১৭টি আসন পেয়ে বিরোধি দলে যায় ভারতঘেঁষা বলে পরিচিত ভুটান পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি পার্টি। দলটির নেতা এবং হবু প্রধানমন্ত্রী লোটায় শেরিং পেশায় একজন চিকিৎসক। বাংলাদেশে পুরো শিক্ষাজীবন কাটানো এই ইউরোলজিস্ট নতুন ভুটান গড়বার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশটির ৭৫ শতাংশ সবুজ বনে আবৃত থাকলেও তিনি তা উন্নিত করতে চান ৮০ শতাংশে! ১৩ বছর বাংলাদেশে থেকেছেন লোটায়। এর মধ্যে ৫ বছর পরান ঢাকার মিটফোর্ডে। বনভূমির প্রয়োজনীয়তা তার চাইতে বেশি কেই বা বুঝবে! শুধু তাই নয় ভুটানের প্রধান রপ্তানি পণ্য জলবিদ্যুৎ। লোটায় বলেছেন, এ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে উজানের নদীগুলোর যদি নূন্যতম ক্ষতিও হয় তবে তিনি এ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেবেন!
অথচ ভুটান…! এককালে ভোট রাজার আতঙ্কে আতঙ্কিত থাকতো পুরো ডুয়ার্স, তরাই, কোচবিহার আর রংপুর-দিনাজপুর। সে ভোটরাজারাই আজ গণতন্ত্রের স্বার্থে জনগনের হাতে তুলে দিয়েছেন ক্ষমতা। গণতন্ত্রের পথে নিজেদের ‘সিনিয়রদের’ দিচ্ছে গণতন্ত্রের পাঠ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন