মধ্যপ্রাচ্যে রাজা-বাদশাহদের চেয়ে যুবরাজরাই বেশি বর্বর। স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী তরুণ, স্বাধীনচেতা মনোভাবের এসব যুবরাজরা রাখঢাক না রেখেই তাদের আগমন জানান দিয়েছেন।
পূর্বসূরিদের মান-সম্মান পায়ে পিষে দেশ শাসন করে চলেছেন। রাশিয়ার স্বৈরশাসক জোসেফ স্টালিন, জার্মানির হিটলার ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মুদ্রাদোষ পেয়ে বসেছে তাদের। একাই সর্বেসর্বা। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না।
সমালোচক ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের শেকড় উপড়ে ফেলতে নিজের পরিবারের সদস্যদেরও ছাড় দেন না তারা। পশ্চিমা রাজনৈতিক আর গণমাধ্যম তাদের ঔদ্ধত্যকে সাফল্য হিসেবে বিজ্ঞাপন করেছে। সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের ‘খাসোগি হত্যার’ টানটান উত্তোজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের ‘যুবরাজদের’ কুকর্মের এসব চিত্র তুলে ধরেছে ইসরাইলের আল হারেৎজ পত্রিকা।
মোহাম্মদ বিন সালমান : ২০১৭ সালের জুন মাসে ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন বিন সালমান (৩৩)। প্রতাপশালী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে ভিন্নমতাবলম্বীদের ধড়পাকড় শুরু করেন।
এক্ষেত্রে নিজ পরিবারের সদস্যদেরও ছাড় দেননি তিনি। একে একে রাজপরিবারের বিদ্রোহী প্রিন্স, মন্ত্রী ও ধনকুবেরদের কারাগারে ভরে দেন। এক বছরের মধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। সালমানের স্বৈরাচারীমূলক নানা কর্মকাণ্ডে দেশ-বিদেশে তার অনেক বন্ধু শত্র“তে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই কাতারের ওপর অবরোধ দিয়ে আলোচনায় আসেন যুবরাজ। সর্বশেষ সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগের তীর সালমানের দিকে।
বাশার আল আসাদ : সিরিয়ার প্রাসাদে বসবাসকারী ‘রাজপুত্র’ আসাদ ক্ষমতায় বসার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। ৩৪ বছর বয়সে ২০০০ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হন তিনি। আসাদ পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন অপথালমোলজিস্ট (চক্ষু চিকিৎসক)।
লন্ডন থেকে ডাক্তারি পাস করেছেন। আসাদের অপরূপ সুন্দরী স্ত্রী আসমাকে ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ ‘মরুভূমির গোলাপ’ অভিধায় ভূষিত করেছিল। পশ্চিমা ‘সংস্কারমনা’ আসাদ সিরিয়ায় এখন রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছেন। লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিকদের লাশের ওপর দিয়ে আসাদকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে পশ্চিমারা। আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদ স্বৈরাশাসক হিসেবে প্রায় তিন দশক নির্যাতন চালিয়েছেন। বাবার চেয়ে এক সের বেশি মধ্যপ্রাচ্যের এ ‘কসাই’।
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ : জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ (৫৬) তার বাবা রাজা হুসেইনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছেন বলে বারবার বলে থাকেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সাংবিধানিক বিপ্লবের যত কথাই তিনি বলুন না কেন এর সবকিছুই ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইতিমধ্যেই আবদুল্লাহর ২৪ বছর বয়সী জর্ডানের ক্রাউন প্রিন্স হুসেইন তার বাবার মতোই একজন শাসক হবেন এমনটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ১৯২১ সাল থেকে এ পরিবার জর্ডান শাসন করে আসছে।
ষষ্ঠ মোহাম্মদ : মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ (৫৫) যিনি ‘গণতন্ত্রের’ শো দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। বাবা মরক্কোর বাদশা ২য় হোসাইনের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন মোহাম্মদ।
২০১১ সালের আরব বসন্তের প্রথম বছরে তিনি ‘সাংবিধানিক সংস্কারের’ কথা বলেছিলেন। তিনি একটি নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন যে নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা জয়ী হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ভাগাভাগির কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশটিতে সংঘাতপূর্ণ বিক্ষোভ চলমান। এতকিছুর পরও মোহাম্মদ একজন সংস্কারবাদী হিসেবে বাহবা পাচ্ছেন।
সাদ হারিরি : লেবাননের ধনকুবের ও প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাফিক হারিরির সন্তান সাদ (৪৮)।
তিনি খাসোগির মতো গুপ্তহত্যা এড়াতে পেরেছেন। লেবাননের নামমাত্র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত আছেন। গত পাঁচ মাস আগে লেবাননের নির্বাচনে জয়ী হওয়া কোয়ালিশনে তার কোনো ভূমিকাই নেই। তিনি লেবানিজ হিজবুল্লাহ দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হন। এতকিছু সত্ত্বেও গণমাধ্যমগুলো তাকে ‘লেবাননের ভবিষ্যৎ’ রূপে আখ্যায়িত করছে।
জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান : আরব আমিরাতের এ ক্রাউন প্রিন্স এমবিজেড নামে পরিচিত। কাতারের সঙ্গে সৃষ্ট কূটনৈতিক সংকটের নেপথ্য সাইড নায়ক তিনি। নায়ক ছিলেন সৌদি প্রিন্স। ২০০৪ সালে ক্ষমতায় বসা নাহিয়ান মতাদর্শে যুবরাজ সালমানের অনুসারী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন