কথা চলছিল কয় দিন ধরেই। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সরকারিভাবে এলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। রাজ্যেরর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নাম বদলের প্রস্তাব পাস করানো হয়েছে। তবে আগামী বছরের শুরুর দিকে অর্ধ কুম্ভ এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নিছকই গেরুয়া রাজনীতি বলে সমালোচনায় সরব বিরোধীরা।
যোগী সরকার যেভাবে তড়িঘড়ি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দেখে বিরোধীরা বলছে, ভোটের আগে হিন্দু আবেগ উস্কে দিতেই এটা করেছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একই সঙ্গে ভোটের অঙ্কে রাম মন্দির নিয়ে হাওয়া তুলে দিতে চাইছে তারা।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা-যমুনা এবং সরস্বতী— এই তিন নদীর সঙ্গম প্রয়াগে। প্রাচীন যুগ থেকেই ওই এলাকাকে প্রয়াগ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মুঘল আমলে সম্রাট আকবর নাম করেন এলাহাবাদ বা আল্লাহর হাতে গড়া শহর। প্রয়াগ নামটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই সরব ছিলেন স্থানীয় হিন্দুদের একাংশ।
যোগী আদিত্যনাথের কথায়, ‘এ বছর এলাহাবাদে শাহি স্নানের দিনক্ষণ ঘোষণার সময়ে অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদ ওই নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানায়।’ স্থানীয় সঙ্ঘ নেতারাও দীর্ঘ দিন ধরে ওই নাম বদলের দাবি তুলছিলেন।
নাম বদলের বিষয়টি নিয়ে কয় দিন ধরেই দলীয় স্তরে আলোচনা চলছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। গত শনিবার স্থানীয় সন্ত শিবিরে গিয়ে তাদের আশ্বাসও দিয়ে আসেন আদিত্যনাথ। গতকাল বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য উঠলে তাতে দ্রুত ছাড়পত্র দেয় সরকার। যোগী প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।
কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারির কথায়, ‘ভোটের কথা মাথায় রেখে জেনে-বুঝেই হিন্দুত্বের তাস খেলতে চেয়েছে সরকার। কারণ সরকার বুঝতে পারছে, তারা কাজের মাধ্যমে জিততে পারবে না। তাই হিন্দুত্বই এখন ভরসা বিজেপির।’
একই সুরে সপা নেতা অনুরাগ ভাদোরিয়া বলেন, ‘সরকারের উচিত হলো, জনগণের জন্য কাজ করা। কাজ করলে নাম এমনিতেই হবে। তখন আলাদা করে নাম বদলের খেলায় নামতে হবে না।’
বিরোধীদের বক্তব্য, যোগীর আমলে অপরাধ বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের হার লাফিয়ে বেড়েছে। এমনকি শিশু মৃত্যুর ঘটনাও আখছাড় ঘটছে। এই অবস্থায় নাম বদলের নাটক করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার।
তবে এই সমালোচনার জবাবে বিজেপি নেতা তথা যোগী সরকারের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘যারা নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তারা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।’
তবে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই যে তৎক্ষণাৎ নাম পরিবর্তন হবে, তা নয়। বিষয়টি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের ওপর। সাধারণত রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কোনও গ্রাম, শহর বা রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তনের আবেদন প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসে। এর পর কেন্দ্র নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা, পরিবর্তন করা হলে তার কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা তা নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ, ডাক বিভাগ, টেলিকম মন্ত্রণালয়, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ও রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে।
যদি সব পক্ষ নাম পরিবর্তনে সায় দেয়, তা হলে সেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যকে। তবে এ ক্ষেত্রে যেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্য দুই জায়গাতেই বিজেপি সরকার রয়েছে, তাই দ্রুত নাম পরিবর্তন হয়ে যাবে বলেই মনে করছে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন