ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষার্থী ইসরাইলের জেরুজালেম শহরে অবস্থিত হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য তার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছেন।
লারা আলকাসেম নামের ২২ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে অবস্থিত ইসরাইলি কনস্যুলেট কর্তৃক তিনি ইসরাইলে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে যান।
কিন্তু তিনি ইসরাইলের তেল আবিব বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে ইসরাইলে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
গত বছর ইসরাইল একটি আইন প্রণয়ন করেছিল। ওই আইনের মাধ্যমে যেসব ব্যক্তি ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরোপ করা বয়কটের প্রতি সমর্থন জানায় সেই সকল বিদেশিদেরকে দেশটিতে প্রবেশে বাধা দেয়া যাবে।
আলকাসেম যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় ‘Students for Justice in Palestine’ নামের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইসরাইলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী গিলাদ এরডান বলেন, তিনি আলকাসেমের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন যদি আলকাসেম তার অতীতের ইসরাইল বিরোধী কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করতে অস্বীকার করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার আলকাসেমকে তেল আবিবের জেলা আদালতে দেখা যায়, কিন্তু সেখানে তিনি কোনো কথা বলেননি।
আলকাসেমের একজন আইনজীবী ইয়োতাম বিন হিল্লেল আদালতে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে, বছর খানেক পূর্বেই তিনি ‘Students for Justice in Palestine’ এর সদস্য পদ ছেড়ে দিয়েছেন।
ইয়োতাম বিন হিল্লেল আদালতকে আরো জানান, আলকাসেম কখনো জনসম্মুখে ইসরাইলকে বয়কট করার জন্য কোনো ধরনের কথাবার্তা বলেননি। ইসরাইলি কর্মকর্তারা শুধুমাত্র তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে ‘Students for Justice in Palestine’ নামের সংস্থার কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই শিক্ষার্থীর পড়ালেখার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
তবে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা ইওসি জাদোক আলকাসেম সম্পর্কে একেবারে ভিন্ন চিত্রায়ন করেন। তিনি আলকাসেমকে ইসরাইল বয়কট আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে বর্ণনা করেন।
একই সাথে জাদোক একথাও বলেন যে, আলকাসেম ইসরাইলে আসার পূর্বে তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে ইসরাইল বিরোধী সমস্ত মন্তব্য সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি একে ইসরাইল বিরোধীদের একটি সাধারণ কৌশল বলে বর্ণনা দেন।
আসহের ফ্রেডম্যান নামের ইসরাইলের কৌশলগত মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এর বিরুদ্ধে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমাদের একটি পরিষ্কার আইন রয়েছে। ‘Students for Justice in Palestine’ এর নেতা হিসেবে আলকাসেমের ইসরাইল বিরোধী কার্যক্রমের ভিত্তিতে আমরা বিশ্বাস করি যে, আলকাসেম আমাদের আইন ভঙ্গ করে এমন কাজ করেছেন।’
আলকাসেমের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো লেওরা বেচোর নামে অপর একজন আইনজীবী জানিয়েছেন- তার মক্কেল ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না।
হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলকাসেমের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন উপদেষ্টা পেপি ইয়েকিরভেইচ ইসরাইলকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা দিয়ে, আলকাসেমকে ইসরাইলে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়ার জন্য আদালতের প্রতি আবেদন জানান।
তিনি বলেন, ‘ইনি শুধুমাত্র এমন একজন ব্যক্তি যিনি ইসরাইলের সুনাম বৃদ্ধি করতে চান।’
তবে ইসরাইলের জেলা আদালত এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো রায় দেন নি।
আদালতে শুনানির পরে আলকাসেমকে তেল আবিব বিমান বন্দরের নিকটে একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রটির কর্মকর্তাদের মতে, ইসরাইলে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আলকাসেমকে প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছে।
ইসরাইলের বাম-পন্থী রাজনৈতিক দল মেরেটজ পার্টি এর একজন সংসদ সদস্য মোসি রাজ এবং তার সহকর্মীরা আলকাসেমের সাথে দেখা করেছেন। মোসি বলেন, তার মানসিক অবস্থা খারাপ এবং তাকে ইসরাইলে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আদালতে ডান-পন্থী দলগুলোর চাপ প্রয়োগ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা আদালতকে তাদের মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
আলকাসেমের বিচার চলাকালে আরোন গোতলিয়েব নামের একজন ইহুদি হাতে একটি ইসরাইলি পতাকা নিয়ে আদালতে আসেন। আহরোন গোতলিয়েব ব্রাজিলে জন্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ইসরাইলে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। ইসরাইলি আইন অনুযায়ী একজন ইহুদি হিসেবে তিনি সেখানে সমস্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন।
আহরোন গোতলিয়েব বলেন, ‘আমাদের এটি নিশ্চিত হওয়া দরকার যে, আমাদের দেশে যাতে কোনো শত্রু প্রবেশ করতে না পারে।’ৱ
আহরোন গোতলিয়েবের মতে বেশীরভাগ ইসরাইলি এমনটি মনে করেন। আদালতের বাহিরে আগত অনেক ইসরাইলির মধ্যে মালকা উইনিস্টেইন নামে একজন তার বন্ধুদের সাথে বিচার প্রক্রিয়া দেখতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশসমূহ এ সমস্ত লোকজনদের তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেয় না। আপনি যদি এই দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে এখানে কখনো প্রবেশ করবেন না। যেখানে আপনার ভাল লাগে সেখানে যান।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসরাইল বর্ণবাদী নয় বরং এর বিরুদ্ধে, তবে আমাদের দেশের নিজেদেরকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আলকাসেম হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Human Rights and Transitional Justice’ বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইসরাইলের হারের্টজে নামে পত্রিকায় আলকাসেমকে উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ব্যঙ্গ চিত্র ছাপা হয়েছে। যাতে দেখা যায় ‘আটক কেন্দ্রে বসে থাকা আলকাসেমকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের কর্মধারায় এটি ব্যবহারিক শিক্ষার অংশ।’
সূত্রঃ আরআইএস দ্যা ওয়ার্ল্ড
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন