সম্প্রতি জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিছু কিছু গণমাধ্যম নিকি হ্যালি ঠিক কি কারণে পদত্যাগ করেছেন তা জানতে অনেকগুলো প্রশ্নের অবতারণা করেছন। কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন, কেন তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক-কূটনীতিক জীবনের ইতি টানছেন? তবে কিছু প্রশ্ন রয়েছে এমন যেগুলো খুবই সাধারণ: নিকি হ্যালি পরিবর্তনশীল ইসলামের প্রতি কী মনোভাব পোষণ করতেন?
১। ইরান: প্রথমত ইরানের কথা ধরা যাক। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে হ্যালি এক বিবৃতিতে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে নেয়ার অভিযোগে ইরানের প্রতি তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দেখে যাবো না। তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে আপনারা আমাদেরকে দেখবেন। আমরা যা বলি তা করি এবং আপনারা দেখবেন আমরা ঠিকই তা করব।’
তখন থেকে তিনি ইরান বিরোধী অন্যান্য দেশসমূহের সাথে একত্রিত হয়ে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করেছিলেন।
নিকি হ্যালি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘মধ্য প্রাচ্যের চলমান সংঘাত সম্পর্কে যদি আমরা সত্যি করে বলি, তবে আমাদেরকে প্রথমেই মূল অপরাধী ইরানের কথা বলতে হবে এবং একই সাথে এর মিত্র হিজবুল্লাহর কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। কয়েক দশক ধরে তারা এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে।’
তিনি এমনকি ইরানের উপর ‘সংক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায়’ নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেন।
২। সন্ত্রাসবাদ: নিকি হ্যালি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে খুবই কঠোর ছিলেন এবং যেসব দেশ তাদের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিও। গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখে তবে বিশ্বের শক্তিশালী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সমূহকে হারিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হবে না।’
বিশেষত তিনি হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।
‘হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য একটি রেজুলেশন’ পাশ করতে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
হ্যালি বলেন, ‘সুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার চাইতেও হামাস তার সম্পদকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যাবহার করতে ইচ্ছুক।’
হামাসের মত তিনি হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রতিও ব্যাপক ক্ষোভ দেখাতেন। তিনি হিজবুল্লাহকে বিধ্বংসী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।
ইসরাইলের সীমান্তবর্তী এলাকায় হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতি নজর দেয়ার জন্য তিনি জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছে বলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্যও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
৩। ইসরাইলকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা: ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা সম্পর্কে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের(UNHRC) নেয়া এজেন্ডাকে নিকি হ্যালি ‘এজেন্ডা আইটেম সেভেন’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তার ভাষায়- ‘কুৎসা রটনাকারী এই এজেন্ডার উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র ইসরাইলের সমালোচনা করা।’
তিনি UNHRC এর উদ্যোগের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন।
নিকি হ্যালি UNHRC কে তাদের নেয়া উদ্যোগ পরিহার করতে এবং একই সাথে যেসব কোম্পানি হামাস নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরের সাথে ব্যবসায়ীক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
৪। সিরিয়া: নিকি হ্যালি সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, ‘আসাদকে সিরিয়ার সরকার প্রধান রেখে দেশটির রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব।’
তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আসাদ সরকারের মানবাধিকার পরিপন্থী কাজে মদত দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেন। হ্যালি সিরিয়াতে আসাদ বিরোধী জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন।
৫। উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ: নিকি হ্যালি ২০১৭ সালে বার্তা সংস্থা সিবিএস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রশ্নে আমরা সৌদি আরবকে সমর্থন করি না।’
তিনি কাতার এবং উপসাগরীয় অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে তাদের মধ্যকার ‘সুযোগের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে না পারার দায়ে’ ব্যাপক সমালোচনা করেন। একই সাথে নিকি ‘হামাসকে পৃষ্ঠপোষকতা’ না করার জন্য কাতারের প্রতি আহ্বান জানান।
৬। গাজা উপত্যকা: ২০১৮ সালে মধ্যভাগে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থার মাধ্যমে গাজা উপত্যকার জন্য দেয়া সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিকি হ্যালি সেসময় বহু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবা দেয়ার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করেছিলেন।
অন্যদিকে ইসরাইল United Nations Relief and Works Agency(UNRAW) কে হামাসের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযুক্ত করে। ইসরাইলের ভাষায় UNRAW এবং হামাস একত্রে ইসরাইলের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান বিক্ষোভে মদত দিয়ে যাচ্ছে।
উপরোল্লেখিত বিষয় থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, নিকি হ্যালি একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ। তার দায়িত্ব পালনকালে তিনি ইসলামকে সন্ত্রাসী মতবাদ এবং মুসলিম সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করতে এমন কোনো কৌশল নেই যা তিনি প্রয়োগ করেননি।
সূত্রঃ ক্লারিয়ন প্রোজেক্ট।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন