ইলহান ওমর, আমেরিকার এক উদীয়মান নারী রাজনীতিবিদ যিনি আমেরিকান মুসলিমদের অধিকহারে মার্কিন রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য উৎসাহিত করছেন।
কেনিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে আমেরিকার প্রথম সোমালী বংশদ্ভুত আইনসভার সদস্য এই রাজনীতিবিদের যাত্রা শুরু হয়। যেখানে তার পরিবার সোমালিয়ার ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
১৯৯৫ সালে আমেরিকাতে অভিবাসনের পর ইলহান ওমর আমেরিকার কথিত আদর্শ ও বাস্তব পরিস্থিতির বৈসাদৃশ্য দেখে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন।
কিন্তু তার দাদা, যিনি ছিলেন আমেরিকার ইতিহাসের একজন ছাত্র, তাকে অনুপ্রাণিত করেন। ইলহানের মতে,
“তিনি আমাকে বলেন, আমি সেখানে বসে শুধু অভিযোগই যেন না জানাই। আমাকে সেবা প্রদান করতে হবে।”
২০১৬ সালে তিনি মিনেসোটা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ডেমোক্রেটিক ফারমার লেবার পার্টির পক্ষ থেকে আইনসভার একজন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের আগস্টে মিনেসোটা ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে তিনি জয় লাভ করে মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী সদস্য হিসেবে প্রবেশের পথে অগ্রসর হন।
অভিবাসী ও শরণার্থীদের আমেরিকার মূল সমাজে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ৩৬ বছর বয়সী এই নারী এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেন।
আমেরিকার উইম্যান অর্গানাইজিং উইম্যান নেটওয়ার্কের তিনি একজন পরিচালক। আমেরিকার কংগ্রেস নির্বাচনে মিনেসোটা থেকে ডেমোক্রেটিক ফারমার লেবার পার্টির পক্ষ থেকে তিনি একজন প্রার্থী।
তীক্ত অতীতের শিক্ষা নিয়ে ফলপ্রসু ভবিষ্যতের নির্মান
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে ইলহান ওমরের জন্ম, কিন্তু তিনি বেড়ে উঠেছেন বাইদাবুতে। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি সকলের ছোট।
ইলহানের পিতা নুর ওমর মুহাম্মদ একজন সোমালী স্কুল শিক্ষক এবং তার মাতা ছিলেন নৃতাত্ত্বিক বেনাদিরি গোত্রের একজন গৃহিনী। ইলহানের শৈশবেই তার মা ইন্তেকাল করেন। ফলে তিনি তার পিতা ও দাদা আবুকারের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেন। তার দাদা ছিলেন সোমালিয়ার জাতীয় সমুদ্র পরিবহনের পরিচালক।
১৯৯১ সালে সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, ইলহান ও তার পরিবার দেশ ছেড়ে কেনিয়াতে চলে আসেন এবং এখানকার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। ১৯৯৫ সালে তারা আমেরিকার ভার্জেনিয়ায় বসবাসের জন্য অভিবাসন করেন।
সেখান থেকে তারা মিনেপোলিসে স্থানান্তরিত হন যেখানে ইলহান তিন মাসের ব্যবধানে ইংরেজি শিখেন। তিনি এডিসন হাই স্কুল থেকে পাঠ গ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালে নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গ্রাজুয়েশন করেন।
দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্জন
ইলহান ঘন্টা প্রতি কমপক্ষে পনেরো ডলার ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি টিউশনের ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা লোনের ব্যবস্থার পক্ষেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
ইসরাইলী শাসকদের বিভেদ নীতির তিনি সম্পূর্ণ বিরোধী এবং ইসরাইল বিরোধী আন্তর্জাতিক আন্দোলন বয়কট, ডিভাস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংঙ্কশনের তিনি একজন সমর্থক।
২০১৪ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক ফারমার লেবার পার্টির নারীদের হল অব ফেমে স্থান করে নেন। ২০১৫ সালে তিনি আমেরিকার আফ্রিকান অভিবাসীদের একটি মিডিয়া আউটলেট মাশেল এর পক্ষ থেকে কমিউনিটি লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
২০১৭ সালে “Firsts Women who are changing the world” শিরোনামে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান করে নেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন