মার্কিন ধর্মযাজক এন্ড্রু ব্রানসনের আটকাদেশ নিয়ে সম্প্রতি আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের কারণে সিরিয়াতে দুই দেশের স্বার্থই হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই দুই দেশের মধ্যকার মিত্রতা ভেঙ্গে পড়ে তবে এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ইরান এবং রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের মধ্যকার বিরোধের জের ধরে তুর্কি লিরার মান নিম্নগামী হওয়ার প্রেক্ষিতে এই দুই ন্যাটো মিত্রের মধ্যকার সম্পর্কে এখন তলানীতে অবস্থান করছে।
এই দুই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এরদোগান তারা দুজনেই কিন্তু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আলা-আসাদের বিপক্ষে এবং দেশটিতে ২০১১ সালে সন্ত্রাসীদের উত্থানের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং তুর্কি উভয় দেশই বাসার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও তুরস্ক বাসার আলা-আসাদের দুই মিত্র রাশিয়া এবং ইরানের সাথে শান্তি আলোচনা চালু রেখেছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিয়ত সিরিয়াতে তুরস্কের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে আমলে না নিয়ে চলছে।
এতদসত্বেও, ট্রাম্প তুরস্কের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভাগের প্রধান জসুয়া লান্ডিস নিউজ উইককে জানান, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দুটি পরস্পর বিরোধী পররাষ্ট্র নীতি চালু রেখেছে।’
‘একটি হচ্ছে নিজ দেশের ব্যাপার সমূহের জন্য হোয়াইট হাউজ দ্বারা পরিচালিত নীতি, অন্যটি পরিচালিত হচ্ছে প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা কৌশলগত বিষয়ের জন্য।’
যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ওপর যাজক ব্রানসনকে আটক রাখার শাস্তি হিসাবে তুরস্কের অর্থনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ব্রানসন তুরস্কের নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সাথে ২০১৬ সালে এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগহণ করা এই যাজক তুরস্কে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছেন এবং তিনি দেশটির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়ার অভিযোগে আটক রয়েছেন।
তুরস্ক চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ার আফরিন শহরে কুর্দি যোদ্ধাদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
এসব ঘটনার পরেই ট্রাম্প তার দেশের যাজক ব্রানসনকে দীর্ঘ সময় ধরে আটক রাখার কারণে তুরস্কের ওপর একটি বৃহৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল।
আঙ্কারাও খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছরের ১০ আগস্ট হুমকি দিয়ে বলেন যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এরকম নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ প্রয়োগ করে কোনো কিছুই আদায় করতে পারবে না এবং এর ফলশ্রুতিতে দুই দেশের মধ্যকার মিত্রতা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
দুই দেশের মধ্যকার অগ্নি বার্তা বিনিময়ের এক পর্যায়ে এরদোগান বলেন, ‘আপনারা একদিকে কৌশলগত মিত্র হওয়ার ভান করছেন এবং অন্যদিকে আপনাদের কৌশলগত মিত্রের পায়ে গুলি করছেন।’
‘আমরা উভয়েই ন্যাটোতে একসাথে আছি এবং এর পরেই আপনি আপনার কৌশলগত মিত্রকে পেছন থেকে ছুরি চালিয়ে দিলেন।’
সিরিয়া ইতিমধ্যেই চলমান বিবেদের সুযোগে তার সৈন্য সামর্থ নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে আছে, এবং দেশটি ইদলিব শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সেখানে একটি বৃহৎ সৈন্য দল প্রেরণ করেছে।
সিরিয়া সৈন্য বাহিনীর সাথে শুধুমাত্র রাশিয়ার সৈন্যরা রয়েছে এবং পেছনে রয়েছে অতি ক্ষুদ্র তুর্কি সৈন্যদের দল, যাতে করে মনে হচ্ছে এরদোগান মস্কোর সাথে একটি নতুন চুক্তিতে পৌছার ব্যাপারে বাধ্য হবেন।
জনাব লান্ডিস বলেন, ‘সাধারণত, রাশিয়া এবং সিরিয়ার সাথে কোনো চুক্তি করার ব্যপারে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সাহয্য নেয়।’
‘যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ন্যাটোর মিত্র, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের সম্পর্কের কারণে এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চেয়ে থাকেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সাহয্য করবে বলে মনে হয় না।’
‘সুতরাং, এরদোগান রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকে পড়বেন এবং রাশিয়া সত্যি সত্যিই চালকের আসনে আসীন রয়েছে।’
‘এটা আমাদেরকে এই বিষয়টির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করে যে, ট্রাম্প তার কূটনৈতিক চালে হেরে গিয়েছে এবং অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তার নিজের পায়ে নিজেই গুলি করেছেন।’
সূত্রঃ এক্সপ্রেস ইউকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন