ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বিধানসভায় তুমুল হট্টগোল হয়েছে। বিজেপি বিধায়করা দিল্লিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করার দাবি করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।
গতকাল (শুক্রবার) দিল্লি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্তা অনুপ্রবেশ ইস্যু উত্থাপন করলে সরকারপক্ষে আম আদমি পার্টি’র (আপ) বিধায়করা তার বিরোধিতা করেন। এসময় বিজেপি বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্তা ও ওমপ্রকাশ শর্মার সঙ্গে সরকারপক্ষের বিধায়করা ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিধানসভায় এদিন বিরোধী দলনেতা বিজেন্দ্র গুপ্তা আপ সরকারের কাছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বহিষ্কারের জন্য বিধানসভায় বিল আনার দাবি জানান। তিনি বলেন, দিল্লিতে অপরাধমূলক কাজকর্ম বন্ধ করতে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এজন্য ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড ভালোভাবে পরীক্ষা করে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়াসহ রেশন কার্ড বাতিল করতে হবে।
তার মতে, বড়সড় অনুপ্রবেশের ফলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং জাতীয় সম্পদের ওপরে বোঝা বাড়ছে। তিনি বলেন, যতদিন দিল্লিতে ‘আপ’ সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা সমর্থন পাবে। এজন্য আপ সরকারকেও শেষ করা প্রয়োজন।
দিল্লি বিধানসভা
বিজেপি বিধায়কের ওই মন্তব্যের পরেই আপ বিধায়ক আমানতউল্লাহ খানসহ অন্যরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এসময় অন্য বিধায়করাও স্পিকারের আসনের সামনে জড়ো হয়ে তুমুল গোলযোগ সৃষ্টি করেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, আপ বিধায়কদের একাংশ বিজেপি বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্তা ও ওমপ্রকাশ শর্মার সঙ্গে কার্যত হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ওই ঘটনায় বিধানসভার স্পিকার আধঘণ্টার জন্য অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন।
পরে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় তাদের সঙ্গে যেসব বিধায়ক দুর্ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গত সোমবারও দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সোচ্চার হলে তীব্র গোলযোগের সৃষ্টি হয়। বিজেপি বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্তাকে স্পিকার রামনিবাস গোয়েল বারবার শান্ত হওয়ার আবেদন জানালেও তিনি তাতে কান না দেয়ায় অবশেষে তাকে মার্শাল ডেকে সারাদিনের জন্য অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
একইদিনে বিজেপি বিধায়ক ওমপ্রকাশ শর্মা আপ বিধায়ক আমানতউল্লাহ খান সম্পর্কে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করে বসলে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। আপ বিধায়করা ওমপ্রকাশ শর্মার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
বিজেপি পাকিস্তানের উদ্দেশ্য পূরণ করছে: কেজরিওয়াল
আপ প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ওই ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ অভিহিত করে বলেন, বিজেপি দেশে হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চাচ্ছে। পাকিস্তান এটাই চায়। বিজেপি’র সঙ্গে আসলে পাকিস্তানের কী সম্পর্ক আছে? বিজেপি পাকিস্তানের উদ্দেশ্য পূরণ করছে বলেও কেজরিওয়াল মন্তব্য করেন।
বিজেপি নন-ইস্যুকে ইস্যু করছে: ড. নাজিবুর
অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বিজেপি’র সাম্প্রতিক শোরগোল প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার কালিয়াচক কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ড. নাজিবুর রহমান আজ (শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আসলে বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় এসেছিল, মানুষের মধ্যে উন্নয়নের আশা দিয়ে। চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতি তারা বাস্তবে রূপায়িত করতে পারেনি। ফলে ‘নন ইস্যু’গুলোকে তারা ‘ইস্যু’ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সামনে ২০১৯ সালের যে জাতীয় নির্বাচন, সেই নির্বাচনে মানুষকে আবার অন্যপথে নিয়ে গিয়ে তাদের কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা করছে। আমরা আশাকরি, ভারতের জনগণ তাদের পরিপক্ক নাগরিকত্ব এবং গণতন্ত্রের মূল্য দিয়ে অবান্তর ইস্যুগুলোর পিছনে না ছুটে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে উপযুক্ত দল বা ব্যক্তিদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে ভারতের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করবেন।’
ড. নাজিবুর রহমান আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আজকের দিনে বিশ্বে ভারতের যে মানসম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, দেশের নাগরিকদের যাতে ‘বিদেশি’ বানানো না হয়, যারা প্রকৃত নাগরিক, তারা প্রকৃত সুবিধা পাক এবং সত্যিকারের কোনো বিদেশি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এ সম্পর্কে বিশ্বজনমত গড়ে উঠুক কেন, একটা দেশে অন্যায়ভাবে তাদের প্রকৃত নাগরিকদের যাতে ‘বিদেশি তকমা’ দিয়ে হেনস্থা করা না হয়- এটাই আমরা আশা করি।’#
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন