যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ সম্পর্কই চাইলেন পাকিস্তানের হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হুবারকে তিনি বলেছেন, ‘পরস্পরের লাভজনক’ ও ‘ভারসাম্যের ভিত্তিতে’ তাঁর সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায়। একই সঙ্গে তিনি আফগানিস্তানেও রাজনৈতিক সমাধানে জোর দিতে চান, যা আগে থেকেই বলে আসছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে আগে থেকেই এই দুই নীতি নিয়ে চলা ইমরান খানের পক্ষে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করা কঠিন হবে। কারণ ইমরান খানের ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ সম্পর্কের দাবি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তি রয়েছে।
ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে আসার পর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচক হিসেবেই আবির্ভূত হন। তিনি বহুবার দুই দেশের ‘ভারসাম্যহীন’ সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, পাকিস্তানে ড্রোন হামলা, তালেবান ও আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইমরান খানের ‘মার্কিন নীতি’ নিয়ে বিশ্লেষকদের কৌতূহল রয়েছে।
গত বুধবার পাকিস্তানে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হুবারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর বানি গালার বাড়িতে দেখা করতে যায়। রাষ্ট্রদূত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তাঁরা পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন।
বৈঠকে ইমরান খান মার্কিন প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে উত্থান-পতনের যে সম্পর্ক দেখে আসছে তা দুই দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতির পরিণাম।
ইমরান বলেন, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় পিটিআই। সুতরাং তাঁর সরকার এই সম্পর্ককে আরো বেশি পরিমাণে ভারসাম্যপূর্ণ ও আস্থাশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এই সম্পর্ককে এখন পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘লাভজনক’ হিসেবে পরিণত করতে জোর দিতে হবে।
এরই মধ্যে ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইরান ও জাপানের রাষ্ট্রদূত। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিটিআই প্রধানকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান। এদিকে চার সদস্যের পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেতাদের অশোভন ভাষা ব্যবহারসংক্রান্ত আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। এতে ক্ষমা প্রার্থনা করায় ইমরান খানসহ কয়েকজনকে সতর্ক করাসহ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের দুটি অভিযোগের কারণে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে গতকাল অশোভন ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহিত পেলেন ইমরান।
ইসিপি গতকাল ইমরান খান ছাড়াও জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক, খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মওলানা ফজলুর রহমানকে নির্বাচনে অশোভন ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়। তাঁরা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়ায় এ অব্যাহতি পান। একই সঙ্গে ইসিপি তাঁদের ভবিষ্যতে একই ধরনের আচরণের জন্য সতর্ক করে দেয়। গতকাল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের আরেকটি অভিযোগ নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে ভোট দেওয়ার বিষয়েও শুনানি হয়। এ সময় ইমরানের প্রধান আইনজীবী দাবি করেন, ইমরান ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ্যে ভোট দেননি। তবে এই বিবৃতিতে ইমরানের সই না থাকায় তা গ্রহণ করেনি ইসিপি।
সূত্র : জিয়োটিভি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন