মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য একরকম মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর গত শুক্রবার এবং শনিবার দুই দফায় তারা ভারতীয় দূতাবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেছে। বিএনপিকে হঠাৎ করেই নির্বাচনে আনতে এত তৎপর কেন পশ্চিমা দেশগুলো?
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দেশগুলো মনে করে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে বাংলাদেশে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শক্তি হিসেবে ইসলামী বা মৌলবাদী শক্তির উত্থান হবে। তারা বাংলাদেশে ২০১৪ এর পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, এসব নির্বাচনে ইসলামী ধারা বা দক্ষিণপন্থী দলগুলো ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানেই দেখা গেছে দলগুলোকে।
পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের মতে, উদারনৈতিক এবং প্রগতিশীল দলগুলোর জনভিত্তি খুবই দুর্বল। তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে যেতে পারছে না। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে বিএনপির যে ভোটগুলো আছে, সেই ভোটগুলোর একটা বড় অংশ ইসলামী শক্তির দলগুলোর কাছে যাবে। তখন বাংলাদেশে আবার মৌলবাদী এবং দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। পশ্চিমা দেশগুলো এটা চায় না। তারা মনে করে যে, ইসলামী শক্তির উত্থান এবং বাংলাদেশে যেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান না ঘটে সেজন্য বিএনপির মতো কিছুটা হলেও মর্ডারেট, উদারনৈতিক, উদার গণতান্ত্রিক দলকে নির্বাচনে আনা উচিৎ। মূলত এ কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে তোড়জোড় শুরু করেছে।
দেশগুলোর মতে, নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারলেও, শুধু সংসদে বিরোধীদলে থাকলেই ইসলামী দলগুলোর উত্থান ঘটবে না। বিএনপি যত দুর্বল হয়ে যাবে, বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলো তত বেশি শক্তিশালী হবে। বিএনপি দুর্বল বা ডিলিট হয়ে গেলে সেই জায়গাটা কখনো যুক্তফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম বা বামদলগুলো নিতে পারবে না বলেই মনে করে পশ্চিমা দেশগুলো। এক্ষেত্রে তারা উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে গত ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং উপনির্বাচনগুলোতে ইসলামী দলগুলোর অনেক উত্থান ঘটেছে।
আরও একটি কারণে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় পশ্চিমারা। আর সেটি হলো, এবারও যদি বিএনপি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনে না আসে তাহলে রাজনীতিতে ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যখনই একটা দেশে ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ নষ্ট হয়ে যায়, সে দেশে তখন স্বৈরতন্ত্র তৈরির আশঙ্কা দেখা যায়। আর সেই আশঙ্কা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। এজন্য তারা বিএনপিকে যেকোনোভাবে নির্বাচনে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। এছাড়া ২০১৪ সালে পার্লামেন্টে যে বিরোধী দল হয়েছে, সেই দল জবাবদিহিতা তৈরি করতে পারেনি। সত্যিকার বিরোধীদল হিসেবে দায়িত্বপালন করতে পারেনি। আর সেজন্য জবাবদিহিতা এবং সুশাসন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জবাবদিহিতা এবং সুশাসন না থাকলে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হয়না। সে কারণে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল জাতীয় সংসদে প্রয়োজন। যাতে করে জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত হয়। সেজন্য তারা মনে করছে, বাংলাদেশে নতুন করে হঠাৎ একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান অসম্ভব। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপির জায়গা দখল করা অসম্ভব। সেজন্য বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত আগ্রহী।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তবে ভারত বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগী হবে কি না, সে বিষয়ে এখনা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। ভারত পশ্চিমা কূটনীতিকদের বক্তব্যগুলো শুনেছে, বিএনপির সঙ্গে কথা বলে তারা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। এখন ভারতের প্রচেষ্টায় বিএনপি কোন পথে গেল তা জানা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই, দলটির কর্মকাণ্ডে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন