যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে চীন বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি হতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইকেল কলিনস। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) ‘ইস্ট এশিয়া মিশন সেন্টারের’ এই উপসহকারী পরিচালক মনে করেন, চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তারে বিশ্ব জুড়ে তাদের যেসব কর্মসূচি চালু আছে, সেগুলোর অন্যতম লক্ষ্য হলো বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাসপেন সিকিউরিটি ফোরামে’ গত শুক্রবার এসব মন্তব্য করেন কলিনস। তিনি এমন সময় এ মন্তব্য করলেন, যখন পাল্টাপাল্টি আমদানি শুল্ককে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে।
গত বুধবার শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী অ্যাসপেন সিকিউরিটি ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অংশ নিয়েছেন। বার্ষিক এ সম্মেলনে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।
শুক্রবার সম্মেলনের তৃতীয় দিনে একটি অধিবেশন ছিল ‘চীনের উত্থান’ বিষয়ক। সেখানে মাইকেল কলিনস দাবি করেন, চীনের সরকার এবং প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মূলত স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যে স্নায়ুযুদ্ধ (যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার) দেখেছি, চীনের স্নায়ুযুদ্ধ সে রকম নয়। তবে যুদ্ধের সংজ্ঞা অনুযায়ী এটা স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যেই পড়ে।’
কলিনস বলেন, ‘চীন এমন একটি রাষ্ট্র, যারা নিজেদের বৈধ-অবৈধ, সরকারি-বেসরকারি, অর্থনৈতিক-সামরিক শক্তিসহ সব সামর্থ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করতে চায়। তবে চীন সরাসরি কোনো সংঘাতে জড়ায়নি। কারণ তারা এ ধরনের সংঘাতে জড়াতে চায় না।’
সম্প্রতি শি চিনপিংয়ের মতাদর্শকে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে কলিনস বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বৈশ্বিক হুমকির মধ্যে আছে, সেগুলোর মধ্যে চীন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
কলিনস আরো বলেন, গত কয়েক বছর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ একাধিক বিষয় নিয়ে মনোযোগী ছিল। কিন্তু চীনের মনোযোগ ছিল একদিকে; নিজেদের দিকে। গত এক দশকে চীন শুধু নিজেকে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ করায় ব্যস্ত ছিল বলেও মনে করেন কলিনস।
শুধু কলিনস নন; এবারের অ্যাসপেন সম্মেলনে অনেকের মুখেই ঘুরে-ফিরে চীনের নাম উচ্চারিত হয়েছে। গত বুধবার উদ্বোধনী দিনে এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে প্রায় একই কথা বলেন। তাঁর মতে, ‘একটা দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব হুমকির মধ্যে আছে, গোয়েন্দা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে চীন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হুমকি। কারণ হিসেবে আমি বলব, এটা তাদের পুরো রাষ্ট্রের একটা প্রচেষ্টা। তারা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরেও নানাভাবে আমাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক ড্যান কোটস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, চীন সত্যিকারার্থেই আমাদের জন্য হুমকি, নাকি শুধুই সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বী।’ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যাবসায়িক নথি ও গবেষণাপত্র চীন চুরির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ তোলেন কোটস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি মারসেল লেটার বলেন, ‘পরাশক্তি হওয়ার জন্য আধিপত্য বিস্তারের কর্মসূচি চীনের অনেকগুলো কৌশলের একটি। আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে সামরিক খাতে সর্বোচ্চ খরচের দিক থেকে চীন এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। তাদের স্থলসেনা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শক্তির দিক থেকে তাদের বিমানবাহিনী বিশ্বে তৃতীয়। তাদের নৌবাহিনীর প্রায় ৩০০টি জাহাজ রয়েছে; ডুবোজাহাজ আছে ৬০টির বেশি। এ ছাড়া এগুলোর সব কিছুই আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র : সিএনএন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন