বাংলাদেশের রাজনীতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মোটামুটি উত্তপ্ত। নানা রকম টানাপোড়েনের খবর শোনা যাচ্ছে। একটি গণমাধ্যমে আবার নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই সংবাদ নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশে আপাতত কোনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনও করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করলে কি হবে?- বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, এটি কোনো গোপন বিষয় নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে চায় না যে, তিনি ক্ষমতায় থাকুক। এজন্যই তারা র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। তিনি জাতীয় সংসদেও বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক ক্ষমতাধর, তারা চাইলেই একটি দেশের ক্ষমতা উলট-পালট করে দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে কেন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, কেন তিনি কঠোর সমালোচনা করছেন- তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী বিতর্ক চলছে।
এর মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা যে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন, সে বাড়তি নিরাপত্তাটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন অন্য দেশগুলোর মতোই এই ৬টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা স্বভাবিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এই নিয়েও কূটনৈতিক অঙ্গনে অস্বস্থির খবর শোনা যায়। সব মিলিয়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একটি নেতিবাচক অবস্থায় আছে- ঠিক সেই সময় ভারতের ভূমিকা কি?- এটিই এখন বড় প্রশ্ন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। অর্থাৎ নির্বাচনে যেন সকল রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি অংশগ্রহণ করে- সেই বার্তাটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সেক্ষেত্রে মার্কিন মনোভাব কি হবে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনও একক খেলোয়াড় নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাকপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় কাজ করেছে ভারতের সঙ্গে মিলে। আর এ কারণেই ভারতের অবস্থান কি সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশিই শুধু নয়, নিকটতম বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না বটে। কিন্তু ভারতের প্রভাব এবং মনোভাব বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে যে অভিপ্রায় প্রকাশ করে, সে অভিপ্রায়ের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র অতীতে যায়নি। এবার যাবে কি না, সেটি যেমন দেখার বিষয়, তেমনি জানার বিষয় হলো, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন এবং রাজনীতি নিয়ে কি বলে?
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। নানা কারণে এ সম্পর্ক বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়েছে। এর একটি প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ ভারতীয় সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে বাংলাদেশে অশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছেন। ভারতের প্রধান বিবেচনার বিষয় হলো, বাংলাদেশে এমন কোনো দল ক্ষমতায় যেন না আসে- যারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লালন করে। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানি ভাবধারা পোষণ করে। এটি ভারতের একমাত্র মাথাব্যাথা।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত তার কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী কোনো দেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। এরকম বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত ভারতের ভূমিকা কি হবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সরকারে বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, তখন ভারত কি করবে?- সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন আকারে সামনে এসেছে, তেমনি মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত কোনো ভূমিকা নিবে কি না, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ দুটি বিষয়ের ওপর বাংলাদেশের রাজনীতির আগামী দিনের গতিপ্রকৃতি অনেকখানি নির্ভর করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন