সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকার ধামরাইয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকেরা। মানববন্ধনে শামসুজ্জামানের মা করিমন নেসাসহ অন্য স্বজনেরা অংশ নিয়েছিলেন। তবে শামসুজ্জামানের মা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি। শুধু তিনি চোখের পানি ফেলেছেন।
আজ শনিবার দুপুরে ধামরাইয়ের ডাউটিয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন শামসুজ্জামানের বড় ভাই প্রয়াত রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা, শামসুজ্জামানের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন, দীপ্ত টিভির সাভার প্রতিনিধি এম এ হালিম, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম, ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আদনান হোসেন, বণিক বার্তার সাভার প্রতিনিধি সোহেল রানা, ঢাকা টাইমসের সাভার প্রতিনিধি আহমাদ সোহান সিরাজি প্রমুখ।
শামসুজ্জামানের মামাতো ভাই মো. ফারুক হোসেন বলেন, শামসের পরিবারের ওপর কোনো কালি নেই। তাঁদের সততা সম্পর্কে এলাকার সবাই অবগত আছেন। দেশের জন্য জীবন দেওয়া পরিবারের সদস্য শামসুজ্জামান। সরকারের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে শামসকে মুক্তি দিন।
সাংবাদিক আহমাদ সোহান সিরাজি বলেন, ‘শামসের বড় ভাই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আজ তাঁর একমাত্র ছোট ভাইকে জোর করে অপরাধী করা হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! তাঁকে যেভাবে রাতের অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত বড় দল পাঠিয়ে ধরে নেওয়া হলো, তাতে মনে হয়েছে তিনি (শামস) বড় কোনো অপরাধী। আপনাদের কাছে প্রশ্ন, তিনি কি আসলেই এত বড় কোনো অপরাধ করেছেন? তিনি একজন মাঠপর্যায়ের সংবাদকর্মী হিসেবে শুধু গণমানুষের মুখের কথাই তুলে ধরেছেন। এতে যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের সবাই অপরাধী।’
মানববন্ধনে বক্তারা অনতিবিলম্বে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
এর আগে একই দাবিতে ধামরাই প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। এ ছাড়া একই দাবিতে আজ দুপুরে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনে আশুলিয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাংবাদিকেরাও মানববন্ধন করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের
সিআইডি পরিচয়ে সাভারের বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শামসুজ্জামানকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে কারাগারে আটক রাখার জন্য আদালতে আবেদন করে রমনা থানার পুলিশ। অন্যদিকে শামসুজ্জামানের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
গত বুধবার ভোর চারটার দিকে সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শামসুজ্জামানের। তুলে নেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টা আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা হয়। এ মামলার বাদী যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া। যদিও মামলার বিষয়টি জানা যায় বুধবার দুপুরের দিকে। তবে বৃহস্পতিবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয় রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা নতুন আরেকটি মামলায়। এ মামলা হয় তাঁকে তুলে নেওয়ার ১৯ ঘণ্টা পর বুধবার মধ্যরাতে।
রমনা থানার যে মামলায় শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী হাইকোর্টের আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)।
২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ারের সময় ‘গ্রাফিক কার্ডে’ ছবির অমিলকে কেন্দ্র করে দেশের ভাবমূর্তি ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ এনে মামলা দুটি করা হয়। যদিও ফেসবুকের ওই পোস্টে অসংগতি দ্রুতই নজরে পড়ে এবং তা সরিয়ে নিয়ে সংশোধনী প্রকাশ করা হয়। এ পোস্টকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা প্রথম আলোর সমালোচনা করে আসছেন। একই সঙ্গে দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করছে।
প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তির দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) বিভিন্ন মানবাধিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, নাগরিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন