একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে থাকা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোকে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে মুখ্য ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। তিনি বলেন, কারণ যাই হোক, ১৯৭১ সালে অনেক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল এবং ওই রাষ্ট্রগুলো এখন পৃথিবীব্যাপী গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছে। অনেককে তারা এসব বিষয়ে সবকও দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, সেই রাষ্ট্রগুলো, আমরা না চাইলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। কিন্তু আজ ২৫শে মার্চ বাংলোদেশ গণহত্যা দিবসে তারা কী বলছে সেটির দিকে আমরা তাকিয়ে থাকবো। কারও নাম উল্লেখ না করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৫২ বছর পরে ঘটনা স্বীকার করে নিলে কেউ খাটো হবে না। বর্তমান বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র এক অর্থে বলতে গেলে গণহত্যার পক্ষে ছিল এবং তারা অব্যাহতভাবে পাকিস্তানকে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে গেছে। তারা পাকিস্তানকে, ইয়াহিয়া খানকে, টিক্কা খানকে তাদের বর্বরতা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে ওই সব দেশের কাছে আবেদন জানাবো তারা যেন বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশের গণহত্যার বাস্তব চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে গবেষক, নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং মিডিয়ার প্রতি আহ্বানও জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গেস্ট অব অনার ছিলেন এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্গেস। আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য অধিকার কর্মী এবং গণহত্যা গবেষক ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্গেস ‘বাংলাদেশ গণহত্যা এবং বৈশ্বিক সম্প্রদায়: তারপর এবং এখন’- শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধ শাজাহান খান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক দেশ বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলেও বিশ্বের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল। সে কারণে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। লিবিয়া, ইরাক বা আফগানিস্তান বা অন্য কোনো দেশ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নীতি বাস্তবায়ন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরাও সংসদে ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছি। জাতীয়ভাবে পালন করছি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমরা ন্যায়ের পক্ষে ছিলাম। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায়িত করার জন্য অনেকে ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু সেই ফাঁদে পা দেননি। মন্ত্রী বলেন, আজ মোড়লরাই রোহিঙ্গাদের গণহত্যার স্বীকৃতি দিলো। আমরা ধন্যবাদ জানাই এই স্বীকৃতির জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের স্বীকৃতি নাই। তারা দেয় না। কারণ এটি সবাই বোঝে যে, তাদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার কারণে তারা স্বীকৃতি দেয় না। অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান অধিকার কর্মী এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটস এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্গেস বলেন- যে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিভিন্ন দেশের গণহত্যা সম্পর্কে জানি। কিন্তু বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে সে ধরনের আলোচনা হয় না। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, পূর্ব-তিমুরে মাত্র সাড়ে ছয় লাখ লোকের বাস এবং সেখানে গণহত্যা হয়েছে সেটি পুরো পৃথিবী জানে। কিন্তু বাংলাদেশে ৩০ লাখ নিহত যাওয়ার পরেও সে সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন