প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদ জুমার নামাজ পড়তে আসেন ৫৮ বছর বয়সী রাসেল লাল বিশ্বাস। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানানোসহ সহযোগিতা করেছেন পরিবার ও স্বজনরা।
রাসেল লাল বিশ্বাস ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা পৌর এলাকার পশ্চিম গারাখোলা গ্রামের মৃত আব্দুল ছাত্তার বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় তিনি ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) গোপালপুরে ২০১ গম্বুজ মসজিদ জুমার নামাজ পড়ার জন্য সকাল ৬টায় যাত্রা শুরু করেন। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছে সেখানে নামাজ আদায় করেন তিনি। সে সময় তাকে দেখতে মুসুল্লি ও স্থানীয় লোকজন ভিড় জমান। তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎও করেন মুসুল্লিরা। পরে শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন রাসেল।
রাসেল লাল বিশ্বাস জানান, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া এলাকায় নির্মিত ২০১ গম্বুজের বিষয়টি জানতে পারি। এসব মাধ্যমে জেনেছেন দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ জুমার নামাজ পড়তে আসেন। সে থেকে ইচ্ছে জাগে এ মসজিদে নামাজ পড়ার।
তিনি জানান, এরপর নিজে সিদ্ধান্ত নেই ২০১ গম্বুজ মসজিদে আসার। বাসে আসলে আশপাশে পরিবেশ দেখা যাবে না ভেবে পুরানো একটি বাইসাইকেল নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানরা সাইকেল নিয়ে আসতে উৎসাহিত করেন। সেই উৎসাহ থেকে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে মসজিদে এসেছেন তিনি।
রাসেল বিশ্বাস আরও জানান, সকাল ৬টার দিকে মধুখালীর নিজ বাড়ি থেকে একটি পুরানো বাইসাইকেল নিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কোনো বিরতি না দিয়ে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাই। ফেরিতে নদী পার হয়ে আরিচা ফেরিঘাটে আসি। এরপর আবার সাইকেল চালানো শুরু করি।
মানিকগঞ্জের শিবালয়, ঘিওর হয়ে দুপুরে দৌলতপুরে পৌঁছাই। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করি। এরপর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা পার হয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অলোয়া এলাকায় একটি মসজিদে রাত যাপনের উদ্যোগ নেই। কিন্তু ওই এলাকার মতিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি বাড়িতে রাত যাপন করার সুযোগ দেন। পরে আবারও প্রস্তুতি নেই গোপালপুরে যাওয়ার।
সেখান থেকে ভূঞাপুর হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টায় আবার যাত্রা শুরু করি। দুপুর ১২টার দিকে গোপালপুরের পাথালিয়া গ্রামের ২০১ গম্বুজ মসজিদে পৌঁছাই। পরে দুপুরের নামাজ আদায় শেষে ওই এলাকা ঘুরে দেখি।
পাথালিয়ার স্থানীয় মুসুল্লি নূর আলম বলেন, রাসেল বিশ্বাস নামের ওই ব্যক্তি ২০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইকেলযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদে প্রাঙ্গণে পৌঁছান। পরে তাকে দেখতে লোকজন ভিড় করেন। তার সঙ্গে অনেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। শুক্রবার দুপুরেও তিনি মুসুল্লিদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন।
এ বিষয়ে ২০১ গম্বুজ মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল করিম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদে এসে দেখি এক ব্যক্তি সাইকেলযোগে ২০১ মসজিদে এসেছেন। পরে তার সঙ্গে কথা বললে, তিনি এ মসজিদে নামাজ পড়া ইচ্ছের বিষয়টি জানান। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায় শেষে তিনি ধনবাড়ীর নবাববাড়ী মসজিদ দেখার জন্য রওনা হন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন