আদা-রসুনের দামে উচ্চ লাফ চিনিতে বাড়ছে ১ ফেব্রুয়ারি
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে চীন থেকে আমদানি করা আদা ও রসুনের দাম। এই আদা কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে এখন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। আমদানি করা চায়না রসুন কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
দেশি বলে পরিচিত কেরালা জাতের আদার দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন ১২০ টাকা।
বাজারে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম। এবার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনির দাম বাড়ল পাঁচ টাকা করে। এতে এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হবে। নতুন এ দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, ‘সব হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম যতটুকু বাড়ানো দরকার, ততটুকু বাড়ানো হয়েছে।’
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে আদা-রসুনের চাহিদা মেটানো হয়। বাজারটি মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন চীন থেকে এসব পণ্য আমদানি করা সরবরাহকারীরা। সম্প্রতি বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মতো আদা-রসুনের বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় চাহিদার শীর্ষে থাকা এ দুটি মসলার দাম অতিমাত্রায় বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চীন থেকে আমদানি করা আদা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। কেরালা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা চয়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা।
গতকাল কারওয়ান বাজারের আদা, পেঁয়াজ ও রসুন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরবরাহ সংকটে চায়না আদা ও রসুনের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। চায়না আদার দাম কেজিতে ৬০-৭০ টাকা বেড়েছে। কেরালা আদার দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। চায়না রসুন কেজিতে ৩০-৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।’
জোয়ারসাহারা বাজারের ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে চায়না আদার দাম। গত সপ্তাহে আমদানি করা চায়না আদা বিক্রি করেছি কেজি ২২০ টাকা, এখন বিক্রি করছি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।’
আদা-রসুন-পেঁয়াজের রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজার। এ বাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনে আদা ও রসুনের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এতে তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। দেশের বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে আদা-রসুনের।
শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজি মো. মাজেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে চীনের বাজারে প্রতি টন চায়না আদা দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ২০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের বাজারে আনতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ২৫০ টাকা। চায়না রসুনের দামও অনেক বেড়েছে। এতে অনেক আমদানিকারক চায়না আদা ও রসুন আনা বন্ধ রেখেছেন। সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত চায়না আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চায়না আদার সরবরাহ কমে যাওয়ায় এখন দেশি আদা নামে পরিচিত ভারতের কেরালা জাতের আদার চাহিদা অনেক বেড়েছে। সেটা আমরা পাইকারিতে প্রতি কেজি ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি করছি।’
বাজারে এক সপ্তাহে মুরগি, ডিম, চাল ও মাছের দাম বাড়েনি। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহ কমছে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির। এতে কিছু সবজির দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিম প্রতি ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ক্রেতার নাগালে রয়েছে ব্রয়লার মুরগি। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির বাজারে তেমন পরিবর্তন আসেনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার কেজি ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
চালের দামে কোনো হেরফের নেই। মোটা চাল ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, চিকন চাল মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
আবার বাড়ল চিনির দাম
গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ও ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে সবশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে করা হয় ১০২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১০৭ টাকা।
গতকাল রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘চিনির দাম তখনই বাড়ানো হয়, যখন প্রয়োজন হয়। আমাদের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন আছে তারা এগুলো হিসাব করে করে। এটা বাড়ানো না হলে বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। সে সব বিবেচনা করে তারা দাম বাড়িয়েছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন