আমি আমার স্বামীকে চাই। আমি নোমানকে ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামী পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারে। আমার স্বামী নদী থেকে উপরে ওঠতে বারবার আকুতি জানালেও নির্দয় পুলিশ তাকে ওঠতে দেয়নি। জোয়ারের স্রোতে মেঘনায় ডুবে সে নিখোঁজ হয়। জেলেরা তাকে নদী থেকে ওঠাতে চাইলেও পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। জেলেরা নোমানকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ জেলেদের গায়ে হাত তোলে। আমার স্বামীকে নদী থেকে উঠিয়ে পুলিশ বিচার করতো। তারা তাকে আটক করতো? আমার স্বামীকে ইটপাটকেল মেরে যেই পুলিশ মেরে ফেলেছে আমি সেই পুলিশের বিচার চাই।
আমি আমার স্বামীর লাশ এক নজর দেখতে চাই। আমার আদরের সাত বছর বয়সী একমাত্র সন্তান আবিরের এখন কি হইবে? ওরে কে দেখবে?’ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মেঘনা পাড়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এমনই আর্তনাদ করছিলেন নিখোঁজ নোমানের স্ত্রী নাসরিন। গত বৃহস্পতিবার থেকে দৌলতখান পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাছঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদী তীরে বসে স্বামীর অপেক্ষায় রয়েছেন স্বামীহারা নাসরিন।
বাবাহারা এতিম ছেলে আবির এখনো বুঝতে পারেনি তার বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না। কেউ জিজ্ঞেস করলে আবির শুধু বলছে- পুলিশ আমার বাবাকে ইট মারায় আমার বাবা নদী থেকে উঠতে পারেনি। বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় মায়ের সঙ্গে নদী পাড়ে বসে কাঁদছে অবুঝ ছেলে আবির। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ ও আত্মীয়স্বজনরা নদী তীরে এসে নোমানের খোঁজে ভিড় করছে। লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় রাতদিন প্রহর গুনছে স্বজন ও স্থানীয়রা। ঘটনার বিবরণ বর্ণনা করে প্রত্যক্ষদর্শী ও নোমানের স্বজনরা জানায়, নোমানের বাড়ি উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সুকদেব স্কুল সংলগ্ন ‘খনকার বাড়ি’। মাছঘাটের একজন শ্রমিক ছিলেন তিনি। মাছঘাটে ট্রলার থেকে মাছ ওঠানামার কাজ ছিল তার। পৌর কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনের আড়তে সে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুরবেলা কাজ না থাকার সুযোগে নদীপাড়ে পাথরের স্তূপের আড়ালে বসে তাস খেলছিল সে। এসময় পুলিশ তাকে ধাওয়া করলে সে ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
গত ৩ দিনেও দৌলতখান ফায়ার সার্ভিস ও বরিশাল কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল রাতদিন ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে নোমানের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। শুক্রবার দুপুরবেলা পর্যন্ত কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল নিখোঁজ নোমানকে উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় তারা উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন। নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে দৌলতখান থানার আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ করে ভোলা পুলিশ লাইন্সে নেয়া হয়েছে। গত দুই দিনে নিখোঁজের ঘটনায় এপর্যন্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই স্বরূপ কান্তি পাল এবং এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল রাসেল ও সজীবসহ ৪ পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। নিখোঁজ নোমানের স্বজনরা জানায়, এ ঘটনায় এখনো পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়নি। লাশ উদ্ধারের পর মামলার প্রস্তুতি নেয়া হবে। এদিকে এলাকার সচেতন মহল ঘটনাটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন