বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আগামীতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রেল মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এরই মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে ভূমি বিভাগ।
জানা গেছে, রেলের পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সহযোগিতা চেয়ে রেলপথমন্ত্রীর কাছে গত ১০ নভেম্বর চিঠি দেন কৃষিমন্ত্রী। ১৫ নভেম্বর রেল সচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন রেলপথমন্ত্রী। এর পর মন্ত্রণালয় রেলের দুই অঞ্চলের কৃষি ভূমির তথ্য চাওয়া হয়।
কৃষিমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ^ব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পাশাপাশি সার ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’ ২০২২ সালের দ্বিতীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগামীতে বিশ^ব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই দেশীয় খাদ্য-শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ খাদ্য নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন।
advertisement 4
কৃষিমন্ত্রী বলেন, রেলের অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশষ্য, শাক-সবজি, ডাল ও তৈল বীজ চাষের উদ্যোগ নিলে তা দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কৃষি উপযোগী মোট জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৫৬০ দশমিক ৫২ একর; এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫ হাজার ৭০ দশমিক ৫৭ ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ হাজার ৪৮৯ দশমিক ১৫ একর। কৃষি লিজ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৭৮ দশমিক ২২ একর; পূর্বাঞ্চলে ৪ হাজার ২২৪ দশমিক ৭ ও পশ্চিমাঞ্চলে ১০ হাজার ৮৫৪ দশমিক ১৫ একর। বর্তমানে কৃষি উপযোগী জমি আছে ৩ হাজার ৯৮৫ দশমিক ৪৯ একর। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৩৫০ দশমিক ৪৯ ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩ হাজার ৬৩৫ একর।
কৃষি জমির পাশাপাশি অফিস ও বাংলোর আশপাশের চাষাবাদযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদনে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা জারির কথা জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, গতকাল সভায় রেলের পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অফিস ও বাসার আশপাশের জমিতে চাষাবাদ করতে হবে। এ বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে খাদ্য নিরাপত্তায় রেলের জমি দ্রুত লিজের ব্যবস্থার নির্দেশ দিলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। নীতিমালার ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেলওয়ের চাষযোগ্য কৃষি জমি স্থানীয়ভাবে বহুল প্রচারিত নিলামের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দিতে পারে। ফলে লিজ প্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। আবার লিজের জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করাও কঠিন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রেলের জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। অফিস ও বাসার পাশেও প্রয়োজনী শাক-সবজি উৎপাদনের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি লিজ নিয়ে চাষাবাদ না করলে সেগুলো বাতিল করে নতুনভাবে লিজ দেওয়া হবে।
এদিকে করণীয় নির্ধারণে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দ্রুত সময়ে জমি লিজ দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছেন ভূমি বিভাগের কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবারের সভায় রেলের পতিত জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। লিজ দেওয়া জমি যাতে পড়ে না থাকে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো এবং কর্মকর্তাদের অফিস-বাংলোর আশপাশের জায়গায় কৃষি, মৎস্য চাষ করতে বলা হয়েছে। জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ না করলে সেগুলোর লিজ বাতিল করে নতুনভাবে লিজের ব্যবস্থা এবং ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন