র্যাবের সংস্কার নিয়ে আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই বাহিনীটি সব সময়ই সংস্কারের মধ্যে আছে। অথচ, একদিন আগেই বাহিনীটির নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশিদ হোসেন বলেছিলেন সংস্কারের প্রশ্নই উঠে না।
এরও একদিন আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণ ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না। আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের এই কথার জবাবেই পরের দিন র্যাবের নতুন মহাপরিচালক এ কথা বলেছিলেন। রবিবার (২ অক্টোবর) আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, বাহিনী সংস্কারের মধ্যেই আছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁওয়ে মানবপাচার নিয়ে (লঞ্চিং অব দ্য ফার্স্ট ন্যাশনাল স্টাডি অন ট্রাফিকিং ইন প্রিজনস ইন বাংলাদেশ) আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এলিট ফোর্স র্যাবকে আমরা দায়িত্ব দিয়ে থাকি। বাহিনীটি সে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে। যদি কেউ ভুল করেন, আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আসে; আমরা সেগুলো স্টাডি করি। কারও যদি এখানে ইনভলভম্যান্ট থাকে সেটিও আমরা দেখছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের কাছে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, সেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত যাচাই করে দেখছি। সেখানে যদি কোনো ভুল থাকে তাও দেখা হবে।
র্যাব সংস্কার ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, র্যাব যখন তৈরি হয়, তাদের ট্রেনিং ইউএসএ দিয়েছে। কাজেই আমরা মনে করি র্যাব যদি কোনো ভুল করে থাকে তবে সেগুলোও আমরা দেখছি। র্যাব বা পুলিশ যারাই অপরাধযোগ্য কাজ করছে তারা কিন্তু শাস্তির বাইরে যায়নি। এখনও অনেক পুলিশ ও র্যাব সদস্য জেল খাটছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আমাদের জানতে হবে তারা অন্যায়টা কি করছে। আর সংস্কারের কথা বলতে র্যাব সবসময় সংস্কারের মধ্যেই আছে। আমরা সবকিছু আধুনিক করছি। যেটা প্রয়োজন সেটাই দিচ্ছি।
এর আগে মানব পাচার নিয়ে আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবপাচার বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ভুক্তভোগীদের যারা পাচার করেছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি এনে এ সমস্যার সমাধান করতে চাই।
২০১২ সালে আইন তৈরি করা হয়েছে। কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
অথচ র্যাবের নতুন মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন শনিবার (পহেলা অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, র্যাবের সংস্কারের প্রশ্নই উঠে না। র্যাব আইনের বাইরে কিছুই করে না।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জানিয়েছিলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমেরিকার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল র্যাবের নতুন মহাপরিচালকের। জবাবে তিনি র্যাবের সংস্কার নিয়ে এমন উদ্ধত বক্তব্য দিয়েছিলেন।
র্যাবের নতুন মহাপরিচালক বলেছিলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সংস্কারের কোনো প্রশ্নই দেখি না। কারণ, আমরা এমন কোনো কাজ করছি না যার জন্য র্যাবকে সংস্কার করতে হবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত যে বিধি আছে, সেই বিধি-বিধান অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না। সে ক্ষেত্রে সংস্কারের তো প্রশ্নই ওঠে না।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে 'গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার' অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও (বর্তমানে পুলিশ মহাপরিদর্শক) এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে - যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট।
নিষেধাজ্ঞা যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র্যাবের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ, তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশনস, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
র্যাবের সংস্কার নিয়ে কার কথা সত্য? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি র্যাবের নতুন ডিজি?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন