চীনের উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন বন্ধে বেইজিংকে জোরালো চাপ দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশের আলেম-ওলামারা। পাশাপাশি চীনের পণ্য বয়কটের আহবান জানান তারা।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সমমনা ১৩টি ইসলামিক দলের রাজনৈতিক জোট সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষনেতারা বক্তব্য দেন।
প্রতিবাদ সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আজ চীনের ৭৩তম জাতীয় দিবসে ‘ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ চীনের ২২ লাখ তুর্কি ও উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন যাবৎ গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক আটকে রাখার প্রতিবাদে এই ‘প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার’আয়োজন করেছে। চীনা সরকার মিডিয়ার সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ রেখে বছরের পর বছর ২২ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, হত্যাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
চীনা সরকার মানবাধিকার কর্মী, সংবাদকর্মী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এমনকি সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী এমন কাউকে চীনের উইঘুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারে রেখে চীনা সরকার এই সকল অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও সামান্যতম সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন বিবিসি, আল-জাজিরা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে কিছু কিছু সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। যা দেখে ও শুনে আমরা হতবাক হয়েছি। পুরো বিশ্বের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনি। আমরা চীনা সরকারের এ ধরনের গর্হিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বক্তারা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্ররা চীনের ওপর নামেমাত্র অবরোধ আরোপ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু চীন সরকার এই সামান্য অবরোধ ও চাপে ক্ষ্যান্ত হয়নি এবং হবেও না। চীনকে থামাতে হলে বিশ্বের সকল দেশ মিলে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস করিয়ে চীনের ওপর ব্যাপকভিত্তিক অবরোধ আরোপ করে চাপ তৈরি করুন। অন্যথায় চীনা দানব সরকার কোনভাবেই গর্হিত কর্মকাণ্ড হতে পিছপা হবে না। তারা অর্থনৈতিকভাবে ধনী দেশ হওয়ার কারণে সারা বিশের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং মুসলিমদের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি অবলীলায় চালিয়ে গেলেও কেউ তাদের আটকাতে সাহস পায় না।
‘তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদলে সারা বিশ্বের বাণিজ্য করিডোর দখল নেওয়ার ঘৃণ্যতম চেষ্টায় লিপ্ত। এভাবে চলতে থাকলে যেকোন সময় শ্রীলংকার মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চায়না সরকারের থাবায় আক্রান্ত হয়ে একসময় নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমরা সারা বিশ্বের সকল সরকারগুলোকে দ্যার্থহীনভাবে জানাতে চাই এখনই চায়না সরকারের সকল অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিন। নাহলে একসময় তারা বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশকেও গিলে ফেলবে,’ যোগ করেন বক্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বক্তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনি তো এখন বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে সমাসীন। আপনার অদম্য সাহস এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং আপনি সারাবিশ্বের প্রশংসা ও কুড়িয়েছেন। আপনার সাহসিকতা সারাবিশ্বে প্রশংসিত, আপনার সাহসিক নেতৃত্ব মুসলিমদের পক্ষে যাবে সেটাই আমরা আশা করি। আপনি তো পারেন চীনের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে। সাহস করে বলুন দেখবেন আপনার পাশে আরও অনেক বিশ্বনেতা ও দেশ দাঁড়িয়ে যাবে। আর এতেই চীনের উইঘুরসহ বিভিন্ন অংশে বিপদগ্রস্ত আমার ভাইবোনেরা চীনা সরকারের করাল থাবা থেকে মুক্তি পাবে। আপনি নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলুন, মহান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবেন এবং এর প্রতিদান দেবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে দানবের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সারাবিশ্বে চায়না পণ্য বর্জনের আওয়াজ তুলি এবং নির্যাতিত তুর্কি ও উইঘুর মুসলিম ভাইবোনদের জন্য দোয়া করি তিনি যেন চীনের ফেরাউন সরকারের হাত থেকে তাদের মুক্তি দান করেন এবং বিজয়ীবেশে, ঈমানদার হিসেবে তাদের কবুল করেন।
প্রতিবাদ ও আলোচনা সভায় সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর কাসেমি, ইসলামী মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসান, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক, বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কাশেম কাসেমী, সেক্রেটারি আজম খান, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি মুফতি আহসান উল্লাহ সালামি, বাংলাদেশ ইসলামী মুভমেন্টের যুগ্ম সম্পদাক নুর ই হেলাল, মুফতি রফিকুল ইসলামসহ সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় বক্তব্য দেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন