জেলা পরিষদ নির্বাচনে এরই মধ্যে ২৭টি জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৩৪ জেলা পরিষদে নির্বাচন আগামী ১৭ অক্টোবর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩২ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। এর মধ্যে ২৭ জেলায় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও বর্তমানে পদহীন ব্যক্তিরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে কাজ করছেন। তবে দলীয় পদপদবি না থাকায় এ ২৭ জেলার বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে নেওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। অবশ্য পরবর্তী সময়ে দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে যেতে পারবেন না। বাকি পাঁচ জেলায় দলীয় পদে আছেন এমন নেতারা যারা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ জেলাগুলো হচ্ছে শেরপুর, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, রংপুর ও কক্সবাজার।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চৌদ্দ দলের শরিক ও জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে তা হবে তাদের ব্যক্তিগত বা স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো সদস্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও অংশ নেননি। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনটা অন্যান্য
নির্বাচনের মতো এতটা জমজমাট হয় না। তবে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তিনি বলেন, বিগত দিনে বিদ্রোহীদের সতর্ক করা হয়েছে। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন (সাতক্ষীরা) ছাড়া কোনো বিদ্রোহী মনোনয়ন পাননি। সুতরাং বিদ্রোহীদের জন্য এটা নজির হিসেবে থাকবে এবং তাদের এ বিষয়টা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছি। এর পরও যারা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে না, তাদের দলের নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত বোঝানোর চেষ্টা করবে। আমার বিশ^াস, তারা যথাসময়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর প্রতি আস্থাশীল হবেন।’
জানা গেছে, বিগত সময়ে বিদ্রোহী হয়ে যারা জয়ী হয়েছিলেন এর মধ্যে পিরোজপুর ছাড়া বাদবাকি প্রায় সবাই এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ফলে এবারও বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্রোহীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যেসব জেলায় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী : আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান (বিদ্রোহী) শফিকুল আলম, কুষ্টিয়ায় জাসদের (ইনু) মহসীন, মাগুরায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিয়াদ মিয়া ও সাবেক যুবলীগ নেতা রাজন, মেহেরপুরে সদর উপজেলার সাবেক সভাপতি গোলাম রসূল, নড়াইলে সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ সমর্থক খলিলুল্লাহ ঝড়–, ময়মনসিংহে ‘বিতর্কিত সংগঠন’ সৈনিক লীগের হামিদুল ইসলাম, জাসদের আমিনুল ইসলাম, নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের জুথি, জাতীয় পার্টি থেকে আসমা আক্তার আশরাফ, শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিদ্রোহী হুমায়ুন কবীর রোমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক-সহসভাপতি জাকারিয়া বিষু, বগুড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক আবদুল মান্নান, জয়পুরহাটে জাসদের প্রার্থী আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াত হোসেন, নাটোরে জাতীয় পার্টির নেতা ড. নূরনবী মৃধা, রাজশাহীতে, আক্তারুজ্জামান ও জাসদের আনোয়ারুল ইকবাল বাদল, দিনাজপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ও যুব ও ক্রিড়াবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দেলোয়ার হোসেন, গাইবান্ধায় জাতীয় পার্টির আতাউর রহমান আতা, স্বতন্ত্র অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলাম ও জাসদের খাদেমুল ইসলাম, নীলফামারী জেলায় জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন, পঞ্চগড় হান্নান শেখ ও দিলদার রহমান, নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মনির হোসেন ভূইয়া, মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট বজলুল হক খান, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রাহী এসএম মোকসেদ আলম, ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সাহাদাত হোসেন, রাজবাড়ী জেলায় পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দীপক কুমার কু-ু, রংপুর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন, পটুয়াখালীতে স্বতন্ত্র হাফিজুর রহমান, সুনামগঞ্জে জেলার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল হুদা মুকুট, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির নারায়ণ রক্ষিত, কক্সবাজার জেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল আবছার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি শাহিনুল হক মার্শাল। কিশোরগঞ্জ জেলায় যুবলীগের আশিক জামাল এলিন ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের হামিদুল আলম চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির আশরাফ উদ্দিন রেনু, চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুল আলম রঞ্জু, যশোরে বিএলডিপি প্রার্থী মারুফ হোসেন, খুলনায় বিএমএ (খুলনা)-এর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম ও আহমেদ দাড়া।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৫ সেপ্টেম্বর ও মনোনয়নপত্র বাছাই হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। জেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন