বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ৫৭৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একই সময়ে ২৮টি জেলায় বাল্যবিয়ের কবলে পড়েছে ২ হাজার ৩০১ জন আর অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন কন্যাশিশু। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এই চিত্র দেখা গেছে। ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বিশেষ শিশুও ছিল। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে তিনজন। একই সময়ে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছে ১৩ জন, তাদের ৫ জন হত্যার শিকার হয়েছে। নাছিমা আক্তার জলি আরও জানান, গত ৮ মাসে আত্মহত্যা করেছে ১৮১ কন্যাশিশু। এ সময়ে ১৮৬ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাওয়ার এ সময়টিতে এসেও কন্যাশিশুর জন্মকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। ছেলেসন্তান জন্ম দেওয়াকে সামাজিকভাবে গৌরবের বিষয় ভাবা হয়। এটি কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণই শুধু নয়, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তিনি বলেন, কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ শুরু হয় একেবারে জন্মলগ্ন থেকে। কিছু ক্ষেত্রে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ধারা ২০(৩)-এ ধর্ষণের মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। কন্যাশিশুদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে অ্যাডভোকেসি ফোরাম। সেগুলো হলো- শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে। উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শিশু সুরক্ষায় আলাদা অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।
বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার বাজেট বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশন এডুকোর স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইনুদ্দিন মাইনুল, হেলেন মনিষা সরকার প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন