২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১৯টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। এর মধ্যে ৬১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।
ফিরে আসা ব্যক্তিরা কোথায় ছিলেন বা না ফেরা ব্যক্তিরা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে জানতে অনুসন্ধান করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
পঞ্চম মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময়সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এসব তথ্য জানান।
সিরডাপ মিলনায়তনে ওই মতবিনিময়সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ ও সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকার।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১৯টি গুমের অভিযোগ এসেছে। ৬২ জনের পরিবার সরাসরি অভিযোগ দিয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে ৪৮টি।
তিনি বলেন, ‘আমরা পত্রিকায় দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ৯টি অভিযোগ নিয়েছি। এর মধ্যে ফেরত এসেছেন ২৮ জন, ৩৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাঁদের পরিবার গুমের অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকে এ বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। আমাদের এখান থেকে তাদের যখন তারিখ দেওয়া হয় বা কমিশনের ডেস্ক থেকে কথা বলা হয়, তখন কিন্তু তারা জানায় না তাদের স্বজন ফেরত এসেছেন কি না। এ ব্যাপারে বলার কোনো আগ্রহ তাদের নেই, এমনকি তারা ফোনও ধরে না। এ রকম একটা অবস্থা। ’
নাছিমা বেগম বলেন, “আবার কখনো কখনো এমন হয়েছে যে বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন আর এগোতে পারেনি। যেমন—আইন ও সালিশ কেন্দ্র একটি পত্রিকার ‘কাটিং’ দিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। সেখানে ‘ভিকটিমের’ একটা টেলিফোন নম্বরও নেই। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়টির তদন্ত করবেন, তারও সুযোগ নেই। ”
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কেউ গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু পরে ফেরত এসেছেন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে—এভাবেই কিছু অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ১০ মাস নিরুদ্দেশ থাকার পর ময়মনসিংহের মেহেদী হাসান ডলারের ফেরত আসার বিষয়টি তুলে ধরেন।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘মেহেদী হাসান ডলার ফেরত এসেছেন। তাঁর কেসটি আমরা নিয়েছি। আমরা পুলিশ সুপারের বক্তব্য চেয়েছি। আমরা বলেছি, তাঁর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে আটক হবেন, বিচার হবে। কিন্তু তিনি এত দিন কোথায় ছিলেন, আমাদের জানান। নয়-দশ মাস ছিলেন না, কেন ছিলেন না? কমিশন এ ধরনের অনুসন্ধান করে। ’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আইনে ‘গুম’ শব্দটি নেই, ‘নিখোঁজ’ আছে। আইনে যা-ই থাকুক, আমরা বলব, কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হলে সরকারের দায়িত্ব তাদের খুঁজে বের করা। আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে সরকারকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ”
চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ গুম প্রতিরোধবিষয়ক ৯টি সনদে স্বাক্ষর করলেও একটিতে এখনো করেনি। এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে ওই সনদে স্বাক্ষর করতে বলা হচ্ছে।
নাসিমা বেগম বলেন, ‘কেউ নিখোঁজ হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে তারা তাকে নেয়নি। তখন তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। ’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পঞ্চম কমিশন মোট এক হাজার ৮০৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। সেগুলোর মধ্যে আগের কমিশনেরও অভিযোগ আছে। করোনাকালে কমিশন চিকিৎসার অধিকার সংরক্ষণ এবং প্রান্তিক অঞ্চলে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করেছে। মহামারিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার বাস্তাবায়নে কমিশন সচেষ্ট ছিল। ’
মতবিনিময়সভায় পঞ্চম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদকালীন বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। উন্মোচন করা হয় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে কমিশন প্রণীত অনলাইন কোর্স এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কমিশন প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক।
kalerkantho
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন